"লেবার ল" অনুযায়ী বাংলাদেশে মাতৃত্বকালীন ছুটির নিয়মাবলী সমন্ধে বিশদভাবে জানতে ইচ্ছুক। সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানভেদে এর কি কোনো রকমফের হয়ে থাকে?

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ - এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী, অন্তঃসত্ত্বা শ্রমিক, সন্তান প্রসবের আগে ৮ সপ্তাহ এবং প্রসবের পরের ৮ সপ্তাহ, মোট ১৬ সপ্তাহ পূর্ণ মজুরিতে ছুটি পাবার অধিকার রাখেন। মালিক এই ছুটি দিতে বাধ্য। চাকরিতে এ ছুটি ভোগ করা যাবে সর্বোচ্চ দু'বার। এবং একটি নির্দিষ্ট হারে তার নিয়োগকর্তা কর্তৃক আর্থিক ভাতা পাবেন। তবে মাতৃত্বকালীন এসব সুবিধা পেতে একজন নারী শ্রমিককে সেই নিয়োগকর্তার অধীনে সন্তান প্রসবের আগে কমপক্ষে ছয় মাস চাকুরি করতে হবে। দুই বা ততোধিক সন্তান জীবিত থাকলে মাতৃত্বকালীন আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে না, কেবল মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়া যাবে। - ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে সরকার সার্ভিস রুল সংশোধন করে সরকারী নারী কর্মকর্তাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করেছে। তবে এই বিধান কেবল সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে এই বিধানটি অনুসরণ করতে পারে। ৬ মাসের এই মাতৃত্বকালীন ছুটি নারী শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য নয়। - কোনো নিয়োগকর্তা যদি জেনে থাকেন যে, তার অধীনস্ত কোনো নারী শ্রমিক অন্তঃসত্ত্বা এবং আগামী ১০ সপ্তাহের মধ্যে তিনি সন্তান প্রসব করতে পারেন, এমতাবস্থায় ওই শ্রমিককে তিনি এমন কোনো কষ্টকর কাজে নিয়োগ করবেন না, যার কারণে অনাগত শিশুটি মায়ের গর্ভে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সন্তান জন্ম দেয়ার পর ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত কাজের এই শিথিলতা চলবে। - গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু হলে সেক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা আর্থিক ভাতা প্রদানের দায় থেকে মুক্তি পাবেন না। আইনের ৪৯ ধারায় এ সংক্রান্ত বিধান রয়েছে। সন্তান প্রসবকালে কিংবা প্রসবের পর আট সপ্তাহের মধ্যে যদি নারী শ্রমিকটি মারা যান, সেক্ষেত্রে দেখতে হবে, তার সন্তানটি বেঁচে আছে কি না। সন্তান বেঁচে থাকলে সন্তানের অভিভাবক মাতৃত্বকালীন ভাতা পাবেন। সন্তান মারা গেলে ওই নারীর মনোনীত কেউ সেই ভাতার অধিকারী হবেন। কাউকে পূর্বে মনোনীত করা না হলে মৃত শ্রমিকের আইনগত প্রতিনিধিরা ওই ভাতা গ্রহণ করবেন। - আইনটির ৫০ ধারায় বলা হয়েছে সন্তান প্রসবের ৬ মাস আগে বা প্রসবের ৮ সপ্তাহ পরে যথাযথ কারণ ছাড়া কোন নারী শ্রমিককে বরখাস্ত, অপসারণ বা চুক্তির অবসান ঘটালে ঐ নারী শ্রমিক তার মাতৃত্বকালীন ভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন না। 

 

মাতৃত্বকালীন ছুটি, এখন প্রায় বলা হয় পেরেন্টাল অথবা পারিবারিক ছুটি, হলো সেই সময়টা যখন একজন মা (অথবা বাবা) চাকুরী থেকে ছুটি নিয়ে থাকেন নবজাতকের জন্মের অপেক্ষায়। এ সময়ে প্রকৃত বেতন এর মানদণ্ড সব দেশে একই। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক কোম্পানি নতুন মাতা-পিতাদের ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত বা তার বেশি বেশ কয়েক ধরণের ছুটি দিয়ে থাকে। যার মধ্যে সাময়িক ছুটি, অসুস্থতাজনিত ছুটি,‌ বিনা বেতনে ছুটি ও পড়ে। অনেক বিচার বিবেচনা আলোচনা সমালোচনার পরে বাংলাদেশ সরকার ২৪ সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটি অনুমোদন করেছে এবং অন্যান্য আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এই ছুটি অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে নির্দেশ দিয়েছে যা প্রশংসার দাবি রাখে ।প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, শ্রমনীতি নিয়ে আলোচনার টেবিলে বিজিএমইএ আরও অনেক দেশের উদাহরণ টেনে এনেছে। যুক্তির খাতিরে আমরা অনেক কিছুই বলতে পারি , কিন্তু যা সঠিক, যা মানবিক তাকেই তো গ্রহন করে সভ্যতা—-আমরা তো কোথাও না কোথাও অনুকরনীয়ও হতে পারি । তাছাড়া ঐ সকল দেশ পোশাক শ্রমিকদের জন্য এমন অনেক কিছুই করে যা আমরা কখনও করতে পারিনি—-আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নির্দেশ দেয়ার পরেও কি আমাদের শ্রমিকদের মজুরী কোন সম্মানজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে ? এত সস্তা শ্রম পৃথিবীর আর কোন দেশে কি খুঁজে পাওয়া যায় ?শিশুরা জাতির ভবিষ্যত। এখানে কিন্তু কোথাও এটা বলা নেই যে—-পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিরদের শিশুরা ছাড়া অন্য শিশুরা জাতির ভবিষ্যত। একটা শিশু সে যে পরিবারে বা যে অবস্থায়ই জন্মাক না কেন সে কিন্তু জাতির ভবিষ্যৎ প্রতিনিধি হিসেবেই জন্মায়—-সুতরাং তার জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার দায়িত্ব কিন্তু শুধু তার পিতা মাতার নয়—সমাজের সকলের। সে তার পিতা মাতার সন্তান তো বটেই, সে কিন্তু সমাজ বা দেশেরও সন্তান। সামাজিক পিতৃত্ব তথা জাতীয় পিতৃত্ব অস্বীকার করে আপনি কি মনে করেন এই সমাজকে আপনি কুসুমাস্তীর্ন করতে পারবেন! নগর যখন পোড়ে দেবালয় কিন্তু এড়ায় না। নারীর নারীত্বকে, নারীর মাতৃত্বকে নারীর দুর্বলতা ভাবা নামান্তরে নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা। নারীকে সম্মান করুন, নারীর মাতৃত্বকে সম্মান করুন —জন্ম ‘নিয়ন্ত্রন’ নয় বরং জন্ম ‘পরিকল্পনা’য় জাতিকে উদ্যোগী হতে আমরা আমাদের মেধা ও সম্পদকে আসুন কাজে লাগাই

Post a Comment

0 Comments