লে-অফ কালীন শ্রমিকের ক্ষতি পূরণ ও মজুরীর হিসাব by Advocate Babar Chowdhury

What is a layoff? Definition and meaning - Market Business News 

প্রথমে ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করা যায়।

লে- অফ ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে আইনের নির্দেশনার সারমর্মঃ
মালিক শ্রমিক কোন চুক্তির অবর্তমানে, সাময়িক শ্রমিক নয় এরূপ কোন শ্রমিক যার নাম কোন প্রতিষ্ঠানে মাস্টার রোলে অন্তর্ভুক্ত আছে এবং যিনি মালিকের অধীনে অন্তত একবছর চাকুরী সম্পূর্ণ করেছেন তাকে মালিক সাপ্তাহিক ছুটির দিন ব্যতিত তার লে অফের সকল দিনের জন্য ক্ষতি পূরণ প্রদান করিবেন এবং ক্ষতি পূরণের পরিমাণ হবে পঞ্চিকা বছরের অবিচ্ছিন্নভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে পয়তাল্লিশ দিনের জন্য কোন শ্রমিকের মোট মূল মজুরি এবং মহার্ঘ ভাতা এবং অন্তবর্তী মজুরি যদি থাকে এর অর্ধেক এবং তাহাকে লে অফ করা না হইলে তিনি যে আবাসিক ভাতা পাইতেন তার সম্পূর্নের সমান। উক্ত পয়তাল্লিশ দিনের অধিক সময়ের জন্য লেঅফ করা হয় এবং উক্ত পয়তাল্লিশ দিনের পর লে অফের সময় যদি আরোও পনের দিন বা তদুর্ধ্ব হয় তাহলে উক্ত শ্রমিককে, প্রত্যেক পনের বা তদুর্ধ্ব দিন সমূহের লে অফের জন্য ক্ষতি পূরণ প্রদান করতে হবে। উক্ত ক্ষতি পূরণের পরিমাণ হইবে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের মোট মূল মজুরি এবং মহার্ঘভাতা বা অন্তবর্তী মজুরী যদি থাকে এর এক চতুর্থাংশ এবং যদি আবাসিক ভাতা থাকে, তাহার সম্পূর্ণের সমান।

উদাহরণঃ
মনেকরি নুন্যতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক ঘোষিত ৩ নং গ্রেডে কর্মরত মিঃ কামাল একজন সিনিয়র অপারেটর, তার মজুরী নিম্মরুপঃ
মাসিক মূল মজুরি ৫৩৩০
বাড়ি ভাড়া ভাতা- ২৬৬৫,
চিকিৎসা ভাতা- ৬০০,
যাতায়াত ভাতা- ৩৫০,
খাদ্য ভাতা- ৯০০,
মোট মজুরি- ৯৮৪৫ টাকা

মিঃ কামালকে কারখানা কর্তৃপক্ষ ১১ই এপ্রিল, ২০২০ থেকে ২৭ই এপ্রিল, ২০২০ পর্যন্ত লে-অফ করেছে তাহলে কামাল লে- অফ ক্ষতিপূরণ কত পাবে?
কামালের হিসাবটি বাহির করার ধাপ সমূহ হবে নিম্মরুপঃ
প্রথমত কামাল যেহেতু মাসিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করে, সেহেতু তার হিসাব নির্ণয়ের জন্য একদিনের মূল মজুরির অর্ধেক নির্ণয় করিতে হবে।
ক্ষতিপূরণের অংশ হিসেবে একদিনের মূল মজুরি অর্ধেক নির্ণয়ের সূত্র হল এক মাসের মূল মজুরিকে উক্ত মাসের দিন গুলো দিয়ে ভাগ দিয়ে, প্রাপ্ত ভাগফলকে আবার দুই দিয়ে ভাগ করে যা পাওয়া যাবে তা সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের একদিনের মূল মজুরির অর্ধেক হবে।
(৪৫ দিনের পরবর্তি লে- অফকৃত দিন গুলোর লে- অফ ক্ষতিপূরণ হিসাবের ক্ষেত্রে একদিনের মূল মজুরি চার ভাগের একভাগ নির্ণয়ের সূত্র হল এক মাসের মূল মজুরিকে উক্ত মাসের দিন গুলো দিয়ে ভাগ দিয়ে, প্রাপ্ত ভাগফলকে আবার চার দিয়ে ভাগ করে যা পাওয়া যাবে তা সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের একদিনের মূল মজুরির চার ভাগের একভাগ হবে।)

কামালের একদিনের মূল মজুরির অর্ধেক নির্নয়ে নিন্মলিখিত তথ্য সমূহ লাগবেঃ
এক মাসের মূল মজুরি- ৫৩৩০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট মাসের (এপ্রিল) মোট দিন- ৩০।

উক্ত সূত্রটি প্রয়োগ করলে কামালের একদিনের মূল মজুরির অর্ধেক হবে- ৮৮.৮৩ টাকা
দ্বিতীয়ত কামাল যেহেতু মাসিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করে তাই সেহেতু তার হিসাব নির্নয়ের জন্য একদিনের আবাসিক ভাতা (বাড়ি ভাড়া ভাতা) সম্পূর্নের পরিমাণ (অর্থাৎ তিনি লে- অফ না করলে যে বাড়ি ভাড়া ভাতা পেতেন) নির্নয় করিতে হবে।
একদিনের সম্পূর্ন বাড়ি ভাড়া ভাতা নির্নয়ের সূত্র হল এক মাসের বাড়ি ভাড়া ভাতাকে উক্ত মাসের দিন গুলো দিয়ে ভাগ করে যা পাওয়া যাবে তা সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের একদিনের সম্পূর্ন বাড়ি ভাড়া ভাতা হবে।
কামালের একদিনের বাড়ি ভাড়া ভাতা নির্নয়ে নিন্মলিখিত তথ্য সমূহ লাগবেঃ
একমাসের বাড়ি ভাড়া ভাতা - ২৬৬৫ টাকা।
সংশ্লিষ্ট মাসের (এপ্রিল) মোট দিন- ৩০
উক্ত সূত্রটি প্রয়োগ করলে কামালের একদিনের সম্পূর্ন বাড়ি ভাড়া ভাতা হবে- ৮৮.৮৩ টাকা
অতএব কামালের একদিনের পরিশোধ যোগ্য লে- অফ ক্ষতিপূরণ
= (একদিনের মূল মজুরির অর্ধেক+ একদিনের সম্পূর্ন বাড়ি ভাড়া ভাতা ) টাকা।
= (৮৮.৮৩+ ৮৮.৮৩) টাকা
= ১৭৭.৬৭ টাকা
তৃতীয়ত আমাদের দেখতে হবে কামাল কারখানা কর্তৃপক্ষ লে- অফকৃত ১১ই এপ্রিল, ২০২০ থেকে ২৭ই এপ্রিল, ২০২০ পর্যন্ত মোট ১৭ দিনের মধ্যে কয়দিন লে-অফের আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন। মনেকরি শুক্রবার উক্ত কারখানার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। কামালের লে-অফকৃত ১৭ দিনের মধ্যে উক্ত মাসের ১৭ এবং ২৪ তারিখ এই দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তাই কামালের লে-অফকৃত দিনগুলো হতে ক্ষতিপূরণ হিসেবের সময় উক্ত দুইদিন বাদ যাবে। অতএব কামালের ক্ষতিপূরন প্রাপ্য দিন হবে (১৭-২)= ১৫ দিন
অতএব লে- অফকৃত উক্ত দিন (১৭ দিন) গুলির জন্য কামালের মোট প্রাপ্য ক্ষতিপূরণঃ
= (একদিনের মোট ক্ষতিপূরণ* ক্ষতিপূরণের জন্য প্রযোজ্য দিন) টাকা
= (১৫* ১৭৭.৬৭) টাকা
= ২৬৬৫ টাকা

লে-অফ কালীন শ্রমিকের মজুরীর হিসাবঃ
লে -অফ কালীন লে- অফকৃত কোন শ্রমিক দিয়ে কাজ করালে উক্ত দিন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক লে-অফ ক্ষতিপূরণ না পেয়ে পুর্ণ মজুরি পাবেন অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে লে-অফ না করলে তিনি যে মজুরি পেতেন তা পরিশোধ করতে হবে।
একদিনের মোট মজুরি নির্নয়ের সূত্র হল এক মাসের মোট মজুরিকে উক্ত মাসের দিন গুলো দিয়ে ভাগ দিয়ে যা পাওয়া যাবে তা সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের একদিনের মোট মজুরি হবে।

উদাহরণঃ
মনেকরি কামাল লে- অফকৃত উক্ত দিনগুলোর মধ্যে ২ দিন কাজ করেছিল তাহলে উক্তদিন গুলিতে তার প্রাপ্য মজুরি হবে নিন্মরুপঃ
কামালের একদিনের মোট মজুরি নির্ণয়ে নিন্মলিখিত তথ্য সমূহ লাগবেঃ
একমাসের মোট মজুরি - ৯৮৪৫ টাকা।
সংশ্লিষ্ট মাসের (এপ্রিল) মোট দিন- ৩০।
উক্ত সূত্রটি প্রয়োগ করলে কামালের একদিনের মোট মজুরি হবে- ৩২৮.১৭ টাকা।
অতএব উক্ত দিন (২ দিন) গুলোর জন্য কামালের মোট পাপ্য মজুরিঃ
= (একদিনের মোট মজুরি* কাজ করা মোট দিন) টাকা
= (২* ৩২৮.১৭) টাকা
= ৬৫৬.৩৪ টাকা।

লে- অফকালীন ক্ষতিপূরণ ও মজুরি পরিশোধের সময়সীমাঃ
মালিক কর্তৃক শ্রমিককে প্রদেয় দায় অর্থে লে- অফ ক্ষতিপূরণ বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১২০ (ঙ) ধারা অনুযায়ী মজুরি হিসেবে পরিগনিত, তাই মাসিক মজুরিতে নিয়োজিত শ্রমিকের মাস শেষে পরর্বতী সাত কর্মদিবসের মধ্যে লে- অফ ক্ষতিপূরণ এবং মজুরি (যদি প্রাপ্য থাকে) পরিশোধ করতে হবে।

[বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা- ১৬, ১৮, ১২০ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধি ২০১৫ এর বিধি ১১৪ আলোকে]

Post a Comment

0 Comments