দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে পেশা হিসেবে মানব সম্পদ
(এইচআর) বিভাগের গুরুত্ব সর্বাধিক। পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একজন ব্যক্তির
ক্যারিয়ারকে গতিশীল করতে পেশাটির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ নির্ধারণ এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে
প্রতিভা ও মেধার সঠিক বিচারে এই বিভাগ কাজ করে। এক কথায় একটি প্রতিষ্ঠানের
কেন্দ্রবিন্দুতে আছে এই বিভাগ।
এইচআর পেশা হিসেবে অত্যন্ত গতিশীল। দক্ষ মানবসম্পদ
কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু চর্চার মাধ্যমে পেশাটি আরো বেশি গুরুত্বের সাথে বিবেচিত
হচ্ছে।
এইচআর বলতে সাধারণত একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের
লক্ষ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঠিক ব্যবস্থাপনাকে বুঝায়। মালিকপক্ষ এই
বিভাগটির মাধ্যমে নিজস্ব তথ্য কর্মীদের প্রেরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য গ্রহণ করে
থাকেন।
যদিও এইচআর বিভাগ কর্মী নির্বাচন, সাক্ষাৎকার
গ্রহণ, প্রতিষ্ঠানের সুযোগ সুবিধার ব্যাখ্যাদান, কর্মীদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার
মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বেশি পরিচিত। তবে বর্তমানে তারা শুধুমাত্র এই সকল
কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
এই বিভাগ বিশ্বাস করে যে, প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো
সম্পদের মধ্যে মানুষ এমন একটি উপাদান যা তার নিজস্ব মেধার দ্বারা অন্য সকল সম্পদের
সর্বোচ্চ ব্যাবহার নিশ্চিত করতে পারে।
নতুন বছরে এইচআর প্রফেশনালদের যে ৬ বিষয়ে খেয়াল
রাখতে হবে :
প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে পরিবর্তন করা :
বর্তমান সময় প্রযুক্তির যুগ। তাই এইচআরকে অবশ্যই
সময়ের সঙ্গে এর সাথে মানিয়ে নিয়ে হবে। পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে
হবে। এইচআর মূলত, সবার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে হয় বলে সকলের প্রত্যাশা যেন
পূরণ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়।
বিশেষত এইচআরকে বর্তমানের ডিজিটাল ব্যবসায়ের
উপযোগী করে প্রতিষ্ঠানের এজেন্ডা সরবরাহ করে সকলকে সহায়তা করতে হবে। এছাড়া,
এইচআরকে একটি ডিজিটাল এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অন্যদের জন্য ভ্যালু তৈরি করতে হবে :
ভ্যালু বলতে এখানে এইচআর কী করে তা বোঝানো হচ্ছে
না। বরং এটা কীভাবে এবং কতটুকু অন্যদেরকে প্রভাবিত করছে তার নির্দেশ বোঝাচ্ছে।
প্রশ্ন হলো, ‘এইচআর একজন কর্মীকে সর্বোত্তম কী সেবা দেয়?’ উত্তর হলো, একটি অর্থবহ
কাজ, উদ্দেশ্য, সহকর্মিতা, ন্যায্য বেতন, নিয়মিত শেখার সুযোগ এবং যেন একটি ভাল
কাজের পরিবেশ থাকে তা নিশ্চিত করা।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে গত ২০ বছর ধরে আমরা
মানুষকে মানবসম্পদে রূপান্তরের কাজ করে যাচ্ছি। আমি মনে করি, যদি এইচআর একজন
এমপ্লয়ির জন্য সর্বোত্তম মূল্য নির্ধারণ করতে পারে- তাহলে সে তার কর্মক্ষেত্রে বা
মার্কেটপ্লেসে ভালো করবে। এইচআরকে মনে রাখতে হবে গ্রাহক এবং বিনিয়োগকারীদের সাথে
মার্কেটপ্লেসে ভালো না করতে পারলে পরবর্তীতে তার জন্য মার্কেটে কোনো জায়গা থাকবে
না।
কাজের পরিধি পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করতে হবে :
ঐতিহ্যগতভাবে এইচআরের সেবা গ্রহণকারীরা মনে করেন,
তাদের কাজ প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারা মনে করেন কর্মীরা বেশি উত্পাদনশীল,
লাইন পরিচালক যিনি সঠিক কৌশলটি ডিজাইন করেন এবং সরবরাহ করেন। ক্রমবর্ধমানভাবে,
এইচআর স্টেকহোল্ডাররা অন্যদের চেয়ে কোম্পানির বাইরে রয়েছেন।
যেমন গ্রাহকরা যারা পণ্য কিনে থাকেন, বিনিয়োগকারী
যারা বিনিয়োগ করেন এবং জনগণ যারা কোম্পানির রেপ্যুটেশন মূল্যায়ন করে থাকেন। তবে
এইচআরকে মনে রাখতে হবে সবার সঙ্গে সংযোগ ও কাজের পরিধি বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের
নিজেদের জায়গা তৈরি করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কাজে নিজেকে
প্রমাণ করতে হবে :
স্টেকহোল্ডারদের কাজ করতে গিয়ে এইচআর ঐতিহ্যগতভাবে
মানবসম্পদ সরবারহে অবদান রেখে যাচ্ছে। তারা সঠিক মানুষ, সঠিক জায়গা, সঠিক সময়,
সঠিক অভিজ্ঞতার লোক সরবরাহ করে যাচ্ছে। তবে, আমি দেখছি যে একটা ‘প্রতিষ্ঠান’ তাদের
(সংস্কৃতি, ক্ষমতা, কর্মক্ষেত্র) ঠিক করার মাধ্যমে ব্যবসায়ের চারগুণ বেশি প্রভাব
ফেলে, তাদের কর্মীদের ‘ব্যক্তিগত’ (প্রতিভা, যোগ্যতা, কর্মশক্তি) কার্যক্রম
বিবেচনা করার থেকে।
যদি সঠিক নেতৃত্ব, স্বতন্ত্র প্রতিভা বের করা যায়
তার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে। সুতরাং যে
কোনো ব্যবসায়ীক সংলাপে এইচআরের অংশীদাররা তাদেরকে প্রশ্ন করতে পারে যে, ‘আমাদের
কাছে সঠিক ট্যালেন্ট, সঠিক কৌশল সরবরাহ করা, গ্রাহকদের সেবা দেওয়া,
বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আস্থা অর্জন এবং সবার সাথে তাদের সফলতা অর্জনের জন্য
সঠিক প্রতিভা, প্রতিষ্ঠান এবং নেতৃত্ব আছে কি?’
এর উত্তর এইচআরকে রেডি রাখতে হবে এবং তাকে মনে
রাখতে হবে যে, তারাই বের করতে পারে সবার প্রতিভা, সংগঠনিক সক্ষমতা এবং সঠিক
ভ্যালুজ। আর এই তিনটি পথের প্রতিটি কীভাবে অগ্রগতি করা যায় তা নির্ধারণ করতে
এইচআরকে একটি প্রতিষ্ঠানের সঠিক গাইডেন্স সিস্টেমের রূপরেখা তৈরি করতে হবে। এই গাইডেন্স
সিস্টেমটি বিস্তারিত এবং ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের
সাফল্যের জন্য নির্দেশিকায় পরিণত করতে হবে।
ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্য ও করপোরেট গভর্নেন্স অনুযায়ী
কাজ করতে হবে :
এইচআর বিভাগের কাঠামো একটি ব্যবসায়ের কাঠামোর সাথে
পরিবর্তিত হয়। কেন্দ্রীভূত ব্যবসায়গুলিতে আরো বেশি কেন্দ্রীভূত এইচআর বিভাগ
রয়েছে। আর বিকেন্দ্রীভূত ব্যবসায়ের আরো বিকেন্দ্রীভূত এইচআর বিভাগ রয়েছে। তাই
এইচআর বিভাগকে ব্যবসায়ের লক্ষ এবং কর্পোরেট গভর্নেন্স ঠিক করতে হবে। সে অনুযায়ী
তার কাজকে প্রতিফলিত করতে হবে।
এইচআরকে নিজস্ব মূল্য পুনরুদ্ধার করতে হবে
এইচআরকে তাদের ব্যক্তিগত বিশ্বাসযোগ্যতার ফিরিয়ে
আনার জন্য নিয়মিত তাদের দক্ষতা স্টেকহোল্ডারদের কাছে সরবরাহ করতে হবে। ব্যবসায়ের
ফলাফল জানানোর সময় সময়ের সাথে পরিবর্তিত বিষয়গুলো জানাতে হবে। সময়ের সাথে তাল
মিলিয়ে এইচআর পেশাদারদের ক্রমাগতভাবে নিজেকে তৈরি করে রাখতে হবে। সবার সাথে
সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে তার অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে হবে।
মো. রওশন আলী বুলবুল |
লেখক: উপ-পরিচালক (এইচআরএম), ওয়ালটন গ্রুপ এবং
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, অ্যালায়েন্স অব গ্রিন এইচআর প্রফেশনালস বাংলাদেশ।
0 Comments