# জলছাদ নিয়ে বিস্তারিত # ছাদ_বাগান নিয়ে বিস্তারিত

#জলছাদ কি ??? :
----------------------
Building এর সর্বোচ্চ তলার ছাদকে রোদ বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবং ঘরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ছাদের উপর চুন, সুরকি ও খোঁয়ার সাহায্যে কমপক্ষে তিন ইঞ্চি পুরুত্বের একটি আলাদা আবরণ দেয়া হয়। একে জলছাদ বলে।

#প্রয়োজনীয়তা ?? 
----------------------

বাড়ির ছাদের উপর বৃষ্টির পানি জমা হলে পানি চুইয়ে ছাদের রডকে মরিচা ধরাতে পারে এ জন্য জলছাদ দেয়া হয়।এছাড়াও
>> ছাদ আর্দ্রতামুক্ত রাখা।
>> রৌদ্রের তাপের হাত থেকে গৃহবাসীকে রক্ষা করা।
>> প্রচন্ড রৌদ্রতাপে মূল ছাদকে ফেটে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা।

#তৈরির_পদ্ধতি ?? 
----------------------

জলছাদ নির্মাণের জন্য প্রথমে খোয়া, সুরকি ও চুন প্রয়োজমত মিশিয়ে নিতে হয়। ইটের খোয়া তৈরি করতে হয় যার মাপ ০.৫ ইঞ্চি পর্যন্ত। খোয়াগুলো প্রথমে ১ ফুট করে বিছিয়ে এর উপর আলাদাভাবে তৈরি করা চুন ও সুরকির মিশ্রণ মেশানো হয়। তারপর বেলচা দিয়ে উল্টে-পাল্টে মিশ্রনের উপাদানগুলোকে ভালোভাবে মেশানো হয়। এরপর পাইপ দিয়ে মিশ্রণের উপর প্রয়োজনীয় পানি দেয়া হয় এবং একই সাথে বেলচা দিয়ে উল্টে দিতে হয়। দৈনিক সকল বিকাল মোট দু’বার করে মসলা কাটার এ ব্যবস্থা ক্রমাগত পাঁচ বা সাত দিন করে মিশ্রণকে কাদার মত নরম করে ফেলা হয়। শেষ পর্যায়ে মিশ্রনের সাথে চিটাগুড়, মেথি ইত্যাদি যোগ করা হয়। প্রতি ঘন মিটার খোয়ার সাথে প্রায় ৩ কেজি চিটাগুড় এবং ১৫০ গ্রাম মেথি ভিজানো পানি মেশানো যায়। নরম এ মসলা মূল ছাদের উপর এমনভাবে বিছাতে হয় যাতে পেটানোর পর ছাদের প্রান্তে কমপক্ষে তিন ইঞ্চি বজায় থাকে। জলছাদের ঢাল সাধারণত প্রতি ৫ ফুটে ১ ইঞ্চি অর্থাৎ ১:৬০ রাখা হয়। মসলা বিছানোর চার পাঁচদিন পর ছাদ পিটানোর কাজ শুরু করা হয়। পিটানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হয় যাতে ছাদ উঁচু না থাকে এবং ঢালের সমতা বজায় থাকে। ছাদের পানি নিষ্কাশন পাইপের সংযোগস্থলে বিশেষ সতর্কতার সাথে মসলা ফেলতে হবে যাতে ছাদের সাম্যতা বজায় থাকে। ছাদের পানি নিষ্কাশক পাইপের সংযোগ স্থলে বিশেষ সতর্কতার সাথে পিটাতে হয়। কারণ জলছাদের ত্রুটির জন্য এখানে পানি চুয়ানোর সম্ভাবনা থাকে। ছাদ পেটানোর সময় প্রতি ঘন মিটার খোয়ার হিসাবে ১১/২ কেজি চিটাগুড় ও ১৫ গ্রাম মেথির পানি চুনের পানিতে গুলে রেখে দেয়। পিটানোর কাজ চলাকালীন ঐ পানি বারবার ছিটিয়ে দেয়া হয়। পিটানোর সময় চুন-সুরকির গোলা উপরে ভেসে উঠলে পাটা দিয়ে সমান করে দেয়া হয় এবং ধীরে ধীরে ছাদ পিটিয়ে ঢাল মিলিয়ে নেয়া হয়।

#Green_Roof
-------------------------- 

জলছাদ করার পর আপনি ছাদেই করতে পারেন বাগান যাকে বলে গ্রিন রুফ
>কেন করবেন?
>কিভাবে করবেন?
>লোড কত আসবে ও কিভাবে ডিজাইন করবেন ?
গ্রিন রুফ এর সাথে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও এগ্রিকালচার ৩ টাই ইম্পরট্যান্ট ভাবে জড়িত।

#ছাদ বাগান / গ্রিন রুফ কি ??
---------------------------------------------

ছাদের উপরে বাগান করা নতুন কোন বিষয় নয়। তবে সবুজ ছাদ বা গ্রীন রুফ বলতে এই বাগান করার বিষয়টাকে দুই একটা টবের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে একটা বিশেষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া বুঝানো হয়ে থাকে। উইকিপিডিয়া অনুসারে একটা ভবনের ছাদ পুরোপুরি বা বা কিছু অংশ পানি নিরোধী আবরণের উপরে বৃদ্ধি উপযোগী কোন মাধ্যমে জন্মানো গাছপালা দিয়ে আচ্ছাদিত থাকলে একে green roof বা সবুজ ছাদ বলা হয়....

#লোড ও ডিজাইন
---------------------------

ছাদের উপরে মাটি তুলে তাতে চাষবাস বা বাগান করলে তা ভবনে অতিরিক্ত ভার দেবে ????????? 
হ্যাঁ .........
আর এই ওজনটা হেলাফেলা করে অবহেলা করার মত না।

আমরা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংএ পুরাতন নিয়মে বাসাবাড়ি বা ভবন নকশা করার সময়ে কাঠামোর নিজের ওজন ছাড়াও প্রতি বর্গফুটে ৪০ পাউন্ড নড়নচড়নশীল ওজন (লাইভ লোড) ধরে হিসাব কিতাব করি। এই ওজনটা হল মানুষের ওজন + মানুষের ব্যবহৃত আসবাবপত্রের ওজনের জন্য। 
তবে স্কুল, কমিউনিটি হল, লাইব্রেরী, মসজিদ, বাসার সিড়ি এসবে এই লাইভ লোড ধরি ১০০ পাউন্ড/বর্গফুট (psf) --- বুঝতেই পারছেন এসব জায়গায় অনেক বেশি মানুষ জড়ো হবে + নড়াচড়া করবে - তাই অতিরিক্ত সতর্কতা।

মাটির ওজন হল প্রতি ঘনফুটে ১১০ পাউন্ড -- এটা অবশ্য ভাল ভাবে দুরমুজ করে জমাট বাধানো (কম্প্যাক্ট করা) মাটির জন্য।

তবে গাছ লাগানোর মাটি হালকা ঝুরঝুরা থাকবে, পিটিয়ে শক্ত করা ঘন মাটি হবে না, তাই ছাদে ১ ফুট গভীরতার মাটি ফেললে অতিরিক্ত ওজন আসবে ১১০ পাউন্ড/বর্গফুটের চেয়ে কিছুটা কম।
এর সাথে সেচের পানির ওজন, পানিরোধী আবরণ স্তরের ওজন, শিকড় বিকর্ষণকারী স্তর, এবং ড্রেনেজ স্তরের জন্য সামান্য অতিরিক্ত কিছুটা ওজন যুক্ত হতে পারে। কাজেই বেশি পরিমান মাটি ফেলে সারা ছাদকে বাগান বানাতে চাইলে ভবন নকশার সময়েই ছাদে অতিরিক্ত ওজন বহনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। 

অবশ্য যদি ৩ ইঞ্চি মাটি দেই তাহলে প্রায় ২৮ পাউন্ড/বর্গফুট ওজন আসবে, যা আগের তৈরী ভবনের ছাদেও সমস্যা করবে না বলে আশা করা যায় (৩ ইঞ্চি মাটিতে মরিচ করল্লা ছাড়াও আরও অনেক রকম গাছ...

#প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
-------------------------
* একটি খালি ছাদ;
* হাফ ড্রাম, সিমেন্ট বা মাটির টব, ষ্টিল বা ট্রে;
* ছাদের সুবিধা মত স্থানে স্থায়ী বেড ( ছাদ ও বেডে মাঝে ফাঁকা রাখতে হবে।);যা
* সিকেচার, কোদাল, কাচি, ঝরনা, বালতি, করাত, খুরপি, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি;
* দোঁআশ মাটি, পঁচা শুকনা গোবর ও কম্পোষ্ট, বালু ও ইটের খোয়া ইত্যাদি;
* গাছের চারা / কলম বা বীজ ।

#বাগান_পদ্ধতি
--------------------------

ছাদে বাগান দু'ভাগে করা যায়।

#প্রথম_পদ্ধতি 

কাঠ বা লোহার ফ্রেমে এঁটে বেড তৈরি করে এবং অন্যটি হলো টব, ড্রাম, পট কনটেইনার এসব ব্যবহার করে। প্রথম ক্ষেত্রে পুরো ছাদ বা ছাদের অংশবিশেষ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্নিশের পার্শ্বে বা আলাদা ফ্রেম করে সুন্দরভাবে ডিজাইন করে সেটিং করা যায়। এ ক্ষেত্রে জল ছাদের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জল ছাদ না থাকলে আলাকাতরার প্রলেপ দিয়ে তার ওপর মোটা পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর মাটি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে অন্তত দু'ফুট পুরু মাটির স্তর থাকতে হবে,তবে যত বেশি তত ভালো। অতিরিক্ত পানি, সার পাবার সুষ্ঠু পথ রাখতে হবে। পরবর্তীতে প্রয়জনীয় পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। ফ্রেম তৈরির ক্ষেত্রে কাঠ, লোহা, স্টিল, মোটা রবার এসব ব্যবহার করা যায়। তবে যা কিছু দিয়ে বা যে ভাবেই বেড তৈরি হোক না কেন ৩/৪ বছর পর পুরো বেড ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করতে হবে। এতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

#দ্বিতীয় পদ্ধতি

জলছাদ নিয়ে বিরিতধ্যে আছে ড্রাম, বালতি, টব, কনটেইনার এসবের যেকোন একটি বা দুটি নির্বাচন করার পর পাত্রের তলায় কিছু পরিমাণ খোয়া (ইট পাথরের কণা) দিতে হবে। ইটের খোয়া পানি নিষ্কাশন এবং অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়া এবং পাত্রের ভেতরে বাতাস চsলাচলের সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রেও অর্ধেক মাটি এবং অর্দেক পঁচা জৈব সারের মিশ্রণ হতে হবে। মনে রাখতে হবে, শাক-সবজি, ফুলের জন্য ছোট খাট টব বা পাত্র হলেও চলে। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে পাত্র/ড্রাম যত বড় হয় তত ভালো। 

টবে/ড্রামে গাছে/ জাত নির্বাচনের পর য়ৌক্তিকভাবে সাজাতে হবে। যেমন বড় গাছ পূর্ব ও দক্ষিন পাশে না দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর পাশে দিতে হবে। এতে আলো বাতাস রোদ ভালোভাবে পাবে।

#তৃতীয়_পদ্ধতি

আরেকটি পদ্ধতি অনেকেই অনুসরণ করে। সুন্দরভাবে বাঁশ/পিলার রড দিয়ে জাংলো বা মাচা বানিয়ে পব/প্লাস্টিকের পাত্রে ফুল, বাহারী গাছ গাছালী, অর্কিড আবাদ করে থাকেন। এক্ষেত্রে ঝুলন্ত টব/পাত্র মাঝখানে না ঝুলিয়ে পাশে ডিজাইন করে সেটিং করলে জায়গার সদ্ব্যবহার করা যায়, দেখতেও সুন্দর লাগে।

জলছাদ বা ছাদের উপরে মাটি তুলে তাতে চাষবাস বা বাগান করলে তা ভবনে অতিরিক্ত ভার দেবে তাই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনার বাড়ির ডিজাইন দেখুন যে এরকম লোড ধরা ছিল নাকি কিংবা যখন বাড়ি করবেন তখন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে ব্যাপার গুলো শেয়ার করুন যেন তিনি অতিরিক্ত লোড ধরেই ডিজাইন করে......
কারন জলছাদ বা ছাদ-বাগানের এই অতিরক্ত ওজনটা হেলাফেলা করে অবহেলা করার মত না।
ছাদ বাগান করুন পরিবেশ কে সুস্থ রাখুন

Post a Comment

0 Comments