উপমহাদেশের কিংবদন্তী তবলা শিল্পী। উত্তর ভারতের মুরাবাদে জন্ম হলেও দক্ষিণ ভারতীয় হিসেবে জীবনের অধিকাংশ সময় পার করেছেন । তাঁর একক তবলা-বাদন-এর মাধ্যমে সংগীতাঙ্গনে একক তবলা বাদন এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। তবলার সাথে সেতার, সরোদ, বাঁশি, কণ্ঠ, কি নেই !! তবলার সাথে সওয়াল-জবাব শুনলে সংগীতবোদ্ধাদের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। বুঁদ হয়ে সব ভুলে তারা সেটা শুনতে থাকেন। এর কারিগর ছিলেন উস্তাদ আহমদ জান থিরাকওয়া।
তাঁর অপূর্ব বাদন শৈলীর জন্য তাকে "Mount Everest of Tabla" বলা হয়ে থাকে। তবলার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে কণ্ঠ ও সারেঙ্গী ছেড়ে তিনি উস্তাদ মুনির খানের কাছে ন্যাড়া বাঁধেন তবলা শেখার জন্য।
উস্তাদ আহমদ জান থিরাকওয়া-র জন্যে আজকের জাকির হোসেন ,চন্দ্রনাথ শাস্ত্রী ,অনন্দ্য চ্যাটার্জি , নিখিল ঘোষের মতো তবলা শিল্পী পেয়েছি আমরা।
হলো কি ? একদিন উস্তাদ আহমদ জান থিরাকওয়া তবলা রেওয়াজ করছিলেন। বয়স তখন ৭৩ পার হয়ে গেছে। কিন্তু একটা "বোল" ঠিক মতো আসছিলো না ! উনিতো নাছোড়বান্দা। "বোল" হাতে আসতেই হবে। হঠাৎ পাশের ঘর থেকে বাচ্চাদের মতো চিৎকার !! কারণ ৭৩ বৎসর বয়সের পরে এসে আজকে এই "বোল" সঠিক ভাবে হাতে উঠলো !!
একেই বলে সাধনা।
এখনতো কিছু কিছু তবলা শিল্পী দাদরা, কাহারবা,ঝুমুর, তেওঁড়া, একতাল,ত্রিতাল এরকম কয়েকটা তাল শিখে তবলা শিল্পী !! কিন্তু এক কাহারবা' ই তো আছে ২০০ রকমের। অনেকে একতালের গান দিব্যি দাদরা তালে সঙ্গত করে তালি নিচ্ছেন!! কিন্তু "তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম, নিবীড় নিভৃত পূর্ণিমা নিশীথিনী সম.... " একতালার এই রবীন্দ্রসঙ্গীত যদি কেউ দাদরা তালে বাজাতে চেষ্টা করে তাহলে শিল্পী গেয়ে আনন্দ পাবে না, যদিও জোড়াতালির তাল দেওয়া হবে।
অনেকে বায়া'র টিউনিং ও জানে না, বললে বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মনে হয় আমি কি উদ্ভট কথা বললাম !!
আমি অনেক তবলা শিল্পীকে রূপক, রূপকড়া, নবতাল, নবপঞ্চমী, একাদশী, গণেশ ইত্যাদি তালের কথা বলে বোকা হয়ে গেছি।
সুতরাং উস্তাদ হওয়ার আগে জিনিষটা ভালো করে শিখে নাও। " তেরে কেটে তাক তাক " শিখেই যদি প্রচার শুরু করি আমি তবলা শিল্পী তাহলে তো প্রজন্ম গোল্লায় যাবে। জাকির হোসাইনক-দের মতো কোনো Industry-তেই নাম নেওয়ার মতো কেউ তৈরী হবে না।
প্রথমে তোমার যা ভালো লাগে তা ঠিক করে নাও যেমন কণ্ঠ ও সারেঙ্গী ছেড়ে উস্তাদ আহমদ জান থিরাকওয়া তবলা বেছে নিয়েছিলেন।
এর পর "সাধনায় নিমগ্ন" হও। সাধনা করতে বলা হয় নি "সাধনায় নিমগ্ন" হতে বলা হয়েছে। যে কাজ তোমার ভালো লাগে তার মধ্যে ডুবে যাও।
দিন-দুনিয়া ভুলে যাও। লক্ষ্যের দিকে একাগ্রচিত্তে, নিষ্ঠার সাথে এগুতে থাকো।
উস্তাদ আহমদ জান থিরাকওয়া-র জন্যে জাকির হোসাইন-দের মতো জগৎ বিখ্যাত শিল্পী তৈরী হয়েছে যে জাকির হোসাইন কে প্রতিদিন ১৪ ঘন্টা তবলা রেওয়াজ না করলে তার মা তাকে খাবার দিতেন না।
সেই জাকির হোসাইন বিখ্যাত গানের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন, আবার সেই গান গেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন কবির সুমন: "প্রথমত আমি তোমাকে চাই দ্বিতীয়তঃ আমি তোমাকে চাই তৃতীয়তঃ আমি তোমাকে চাই শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই। নিঝুম অন্ধকারে তোমাকে চাই রাত ভোর হলে আমি তোমাকে চাই সকালের কৈশোরে তোমাকে চাই সন্ধ্যের অবকাশে তোমাকে চাই .......................................
তুই হাসলেই জাকির হোসাইন তবলা ছেড়ে পায়রা উড়ায়। "
তোমার জীবনের স্বপ্নকে/লক্ষ্যকে বলো, "তোমাকে চাই।" তুমিও হাসবে যখন ধনুর্ভাঙ্গা পণ করে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে সমাজের বুকে।
তখন তুমিও হাসতে হাসতে পায়রা উড়াবে।
0 Comments