শিশু এবং কিশোর/কিশোরী
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ এবং বাংলাদেশের সংবিধানে অনুযায়ী আঠারো (১৮) বছরের কম বয়সী সকল বাংলাদেশী ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে এবং চৌদ্দ (১৪) থেকে আঠারো (১৮) বছরের কম বয়সী শিশুদেরকে কিশোর/কিশোরী হিসেবে গন্য করা হয়। স্কুল চলাকালীন সময় চৌদ্দ (১৪) বছরের নিচে কোন শিশুকে তার পরিবারের লিখিত অনুমতি ছাড়া উৎপাদনশীল কাজে নিয়োগ দেয়া বা কাজ করিয়ে নেয়াকে শিশুশ্রম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথবা শিশু শ্রম বলতে শিশুদের শ্রমের সময় প্রত্যক্ষভাবে উৎপাদন কাজে এবং পরোক্ষভাবে গার্হস্থ্য শ্রমে ব্যয় করাকে বোঝায়। ১২ই জুন বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
শিশু শ্রম নিরসনে গার্মেন্টস মালিকের করণীয়:
গার্মেন্টস শিল্প থেকে পর্যায়ক্রমে শিশুদের প্রত্যাহার করা
শিশুদের জন্য বিশেষ বিদ্যালয় স্থাপন করা
শিশুদের পরিবারের প্রাপ্তবয়ষ্ক সদস্যদের কাজে লাগানো
শিশুদের বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করা
বিশেষ তত্ত্বাবধান, নির্দেশনা এবং সতর্কমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা
শিশু অধিকার সনদে মূলনীতি:
বৈষম্যহীনতা
শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা
শিশুর অধিকার সমুন্নত রাখতে পিতা মাতার দায়িত্ব
শিশুদের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন
বাংলাদেশে শিশু শ্রম:
যে বয়সে শিশুর হাতে থাকার কথা ছিল বই আর পেন্সিল কিন্তু তার পরিবর্তে শিশুটি নিজের আহার জোগানোর জন্য কাজের সন্ধানে নামতে বাধ্য হচ্ছে। এক শ্রেণীর লোভী স্বার্থ পিপাসু মানুষ এই সকল শিশুর দারিদ্রের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওদের দ্বারা কাজ করায়। কেননা এ সকল শিশুদের শ্রমের মূল্য খুবই নগন্য। বাংলাদেশে যে সকল সেক্টরে শিশু শ্রমের প্রবনতা বেশি তার মধ্যে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস, প্রিন্ট এবং এমব্রয়ডারি, পোশাক, চামড়া শিল্প, জুতা এবং ইট কারখানা অন্যতম। এখনো বয়ষ গোপন করে অনেক শিশু গার্মেন্টসে কাজ করছে। মার্কিন শ্রম বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে শিশু শ্রম ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে ভারত এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফিলিপাইন।
শিশু শ্রম নীতিমালা
শিশুঃ বিভিন্ন দেশে আর্থসামাজিক অবস্থার ভিন্নতা, সাংস্কৃতিক ও মূল্যবোধের ভিন্নতা, প্রকৃতি ও পরিবেশের ভিন্নতার কারণে দেশে দেশে শিশুর বয়স নির্ধারনে কিছুটা পার্থক্য আছে । আবার একই দেশে কাজের ধরন ও কাজের পরিবেশের কারণে শিশুর বয়স নির্ধারণে পার্থক্য রয়েছে। যেমন জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ(১৯৮৯) অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে সব মানব সন্তানকে শিশু বলা হবে, যদিনা শিশুর জন্য প্রযোজ্য আইনের আওতায় ১৮ বছরের আগেও শিশুকে সাবালক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আইএলও কনভেনশন ১৩৮ অনুযায়ী ১৫ বছরের নিচে মানব সন্তানকে শিশু বলা হবে কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ১৮ বছরের নিচের বয়সের মানব সন্তানকে শিশু বলা হবে। বাংলাাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী যাদের বয়স ১৪ বছর পূর্ণ হয়নি তাদেরকে শিশু বলা হয়।
শিশু শ্রমিকঃ
প্রচলিত আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত বয়সের চেয়ে কম বয়সে কাজে নিয়োজিত সকল শ্রমিকই শিশু শ্রমিক। বিশেষজ্ঞদের ঐক্যমত্য অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল ক্ষেত্রে শিশুর জন্য শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক দিক থেকে ক্ষতিকর এবং শিশুর প্রয়োজন ও অধিকারের সঙ্গে সামজ্ঞস্যহীন বঞ্চনামূলক শ্রমই শিশু শ্রম ।
পোশাক শিল্প কারাখনা একটি শ্রম নিবিড় শিল্প। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় লিড টাইম ব্যবস্থাপনার জন্য কারখানায় প্রচণ্ড কাজের চাপ থাকে। ফলে এ শিল্পে শিশু শ্রমিক নিয়োগ শিশুর মানসিক বিকাশ সহায়ক হবে না বলে কর্তৃপক্ষ মনে করেন যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিশুর জন্য প্রযোজ্য।
এ জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে মানব সম্পদ বিভাগের অফিসারগণ চাকুরীর জন্য আগত প্রার্থীদের জাতীয় পরিচয় পত্র এবং জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে।
বাছাই এর পরও প্রার্থির বয়স নির্ধারনের বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য রেজিস্টার্ড চিকিৎসক এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রার্থীর বয়স নির্ধারণ করা হয়।
কোন কোন ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ প্রার্থীর বয়স প্রমাণের জন্য পরীক্ষা পাশের সনদ পত্র গ্রহণ করেন।
যদি কখনো অত্র প্রতিষ্ঠানে শিশু ও কিশোর শ্রমিক আছে বলে প্রমানীত হয় তাহলে নিম্নে উলে-খিত/শ্রম আইন অনুযায়ী সকল নিয়মনীতি অনুসরনে কর্তৃপক্ষ অঙ্গীকার বদ্ধঃ-
কোন কিশোর শ্রমিককে দিয়ে দৈনিক পাচঁ ঘন্টা সপ্তাহে ত্রিশ ঘন্টার অধিক কাজ করানো যাবে না।
কোন কিশোর শ্রমিককে দিয়ে দৈনিক অতিরিক্ত দুই ঘন্টা সহ মোট ৭ ঘন্টা সপ্তাহে বিয়ালি¬শ ঘন্টার বেশী কাজ করানো যাবে না।
কোন কিশোর শ্রমিককে দিয়ে সন্ধ্যা ৭:০০ ঘটিকা থেকে সকাল ৭:০০ঘটিকার মধ্যে কোন কাজ করানো যাবে না।
কিশোর শ্রমিকের কাজের সময় দুইটি পালায় সীমাবদ্ধ রাখিতে হইবে, এবং কোন পালার সময় সীমা সাড়ে সাত ঘন্টার বেশী হবে।
কোন কিশোর শ্রমিক একই দিনে একাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করিতে পারিবে না।
কোন কিশোর শ্রমিককে দিয়ে ভূগর্ভে অথবা পানির নীচে কাজ করানো যাবেনা।
বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি কিশোর কর্ম ঘন্টা সর্ম্পকে তাহার কাজের নিদির্ষ্ঠ সময় উলে¬খ পূর্বক একটি নোটিশ প্রদর্শন করিতে হইবে।
বিধিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন তাহাদের স্বাস্থ্য উন্নতি এবং শিক্ষা গ্রহনে বাধা এমন কোন কাজ দেয়া যাবে না।
যদি কোন কিশোর শ্রমিক বিদ্যালয়গামী হয় তাহা হইলে তাহার কাজের সময় এমনভাবে নির্ধারন করিতে হইবে যাহাতে তাহার বিদ্যালয় গমনে বিঘিœত না হয়।
কিশোর শ্রমিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এই অধ্যায়ের সকল বিধান যতদুর সম্ভব, উক্ত শিশু শ্রমিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে।
শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শিশুদের উন্নয়নের সার্বিক কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বাংলাদেশ জাতীয় শিশু নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কর্তৃপক্ষ সকল সময়েই শিশু শ্রমিক নিয়োগ নিরুৎসাহিত করে।
শিশু শ্রমের অপকারিতা:
শিশু শ্রমিক দ্বারা ভারি কাজ করালে শিশুরা পঙ্গুুত্ব বরণ করতে পারে
বেশি ঝুকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক কাজে শিশুর মানষিক বিকৃতি দেখা দিতে পারে
শিশুদের পারিশ্রমিক কম থাকায় কাজের প্রতি অমনোযোগী হয়
বর্হিবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে
নিমানের বেতন এবং উচ্চমানের কাজ হওয়ায় কাজের গুনগন মান বজায় থাকে না।
0 Comments