মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মরত মায়েদের মধ্যে বৈষম্য কেন?

 



মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মরত মায়েদের মধ্যে বৈষম্য কেন? এই বৈষম্য কিভাবে ঘোচানো সম্ভব? বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নারী কর্মীদের প্রতি এ ব্যাপারে কতটা উদার হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

  আমানুল্লাহ সরকার

দেশের সংবিধান ও আইনের চোখে সব নাগরিকের মর্যাদা ও অধিকার সমান বলে ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে নারীরা বিভিন্ন ভাবেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আবার সব ক্ষেত্রে সব নারী সমান সুবিধা ও অধিকার ভোগ করতে পারেন না। আমাদের দেশে নারীতে-নারীতে খাতওয়ারি বৈষম্য বিরাজ করছে। বিশেষ করে, নারীর মাতৃত্বকালীন ছুটির সময়সীমা সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে দু’রকম। কেন এক দেশে দুই রকম নীতি হবে? এর থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতেই হবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী সরকারি খাতে কর্মজীবী মায়েরা এখন মাতৃত্বকালীন ছুটি পাচ্ছেন ছয় মাস। অথচ গার্মেন্টখাতসহ বিভিন্ন বেসরকারি খাতে কর্মজীবী মায়েদের বেলায় তা দু’মাস কম। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এর হার আরও কম। মাতৃত্বকালীন ছুটির এই বৈষম্য থেকে বের হয়ে আসতে হলে সরকার কর্তৃক কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সরকারি ও বেসরকারি দুই খাতেই শ্রম আইনের সম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু সরকারি বা বেসরকারি মা বলে আলাদা কিছু নেই, সেহেতু সবার জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ সমান করা জরুরি। সরকারের উচিত বৈষম্য ও অবিচারকে জিইয়ে না রেখে সবার প্রতি সমান আচরণ করা। মা ও শিশুদের মধ্যে অধিকার বন্টনে বৈষম্য চালু রাখা হলে তা এক সময় ব্যাধি হয়ে রাষ্ট্র ও সমাজকে আচ্ছন্ন করবে। সরকারকে এই বৈষম্য অবসানে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কারা কারা মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয় এবং দেয় না সে পরিসংখ্যানও তৈরি করতে হবে। ছুটি দিলেও কতটা দেয় বা সবেতন ছুটি দেয় নাকি বেতন কেটে রাখে সেসবের হিসাব রাখা জরুরি। তাছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিৎ নারী কর্মীদের প্রতি শতভাগ উদারত পোষণ করা (বিশেষ করে মাতৃত্বকালীন সময়ে)। পদক্ষেপ তো সরকারকেই নিতে হবে কিন্তু আমরা যদি আইন না মানি তাহলে সরকারের একার পক্ষে তা বাস্তবে রূপদান সম্ভব না। এজন্য বেসরকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সহ সব ধরনের জনগণকে সচেতন হতে হবে এবং অধিকার সম্পর্কে সচেষ্ট হতে হবে। আমাদের একটাই চাওয়া, যত দ্রুত সম্ভব বৈষম্য ও বঞ্চনার অবসান ঘটুক।

Post a Comment

0 Comments