গল্পে গল্পে কর্পোরেট চিনি

শোনা গল্প। ভুল থাকতে পারে।
এক রাজা তার রাজকন্যাকে কোনো এক রহস্যময় অজানা কারনে একবার জঙ্গলের মধ্যে বনবাসে রেখে আসতে বাধ্য হলেন। কন্যার নাম কাজলরেখা। তো কাজল রেখা জঙ্গলে তার কূটিরে থাকে। জঙ্গলের ফলমূল খায়। একা একা ইশ্বরকে ডাকে।

একদিন জঙ্গলের খালে স্নান করতে গিয়ে দেখে একটা ভেলাতে এক রাজপূত্রের শব ভেসে যাচ্ছে। কাছে গেলে দেখল, রাজপূত্রই। তবে তার সারা শরীরে সূচ বিদ্ধ। প্রায় মৃত। সাথে একখানা পত্র। যাতে লেখা, “কোনো সতিসাধ্বি কুমারী যদি ১২ বছর বসে প্রতিদিন সকালে স্নান, প্রার্থনা শেষে পবিত্র দেহে মনে একটি করে সূচ তুলে তাকে একটি বিশেষ গাছের পাতার রস খাইয়ে যেতে থাকে, তবে সে ১২ বছর পরে সুস্থ্য হয়ে যাবে। কাজলরেখা রাজপূত্রকে কূটিরে নিয়ে এলো।

রোজ সকালে জঙলের খালে স্নান করে। উপাসনা করে। তারপর রাজপূত্রের গায়ের একটি সূচ তুলে ওই বিশেষ গাছের পাতা বেটে রাজপূত্রকে খাইয়ে দেয়। এভাবে করতে করতে গেল ১১ বছর ১১ মাস ২৮ দিন। কঠোর সাধনা ও শ্রম কাজলরেখার। আর একটা সূচ তোলা বাকি। পর দিন সে জঙ্গলে স্নানে যাবার পথে দেখে খাল দিয়ে নৌকা করে এক বৃদ্ধ তার মেয়েকে বিক্রি করতে হাটে নিয়ে যাচ্ছে। কাজলরেখা তাকে দাসী হিসেবে কিনতে চাইল। কিন্তু তার কাছে পয়সা না থাকায় হাতের সোনার কাঁকন খুলে দিল। কঙ্কণ দিয়ে কিনল বলে, সে দাসীর নাম দির কঙ্কণ দাসী। কঙ্কণ দাসীকে সে ঘরে নিয়ে গেল।

তাকে কাজ বুঝিয়ে দিল। রাজকুমারকে দেখে কঙ্কণ দাসী জানতে চায়। কাজলরেখা তাকে সব খুলে বলে। পরের দিন কাজল রেখা স্নানে যাবার আগে কঙ্কণদাসীকে বলে গেল, তুমি একটু গাছের পাতাটা বেটে রাখো। আমি স্নান করে এসে উপাসনা করে বাকি একটা সূচ তুলে ফেলে রাজকুমারকে ওই পাতার রস খাইয়ে দিলেই তিনি সুস্থ্য হয়ে যাবেন। কঙ্কনদাসী সায় দিল।

কাজলরেখা স্নান করে কূটিরে ফিরল। তার মনে অনেক আনন্দ। আজ তার সাধনা পূর্ণতা পাবে। রাজকুমার সুস্থ্য হবে।

কিন্তু এ কী?

কাজলরেখা ঘরে ঢুকতে ঘটে গেল অভাবনীয় এক ঘটনা। সে দেখল, কঙ্কণদাসী বসে আছে রাজকুমারের পাশে, খাটিয়াতে। রাজকুমার সুস্থ্য হয়ে গেছে। কাজলরেখাকে দেখেই কঙ্কণদাসী বলে উঠল, “রাজকুমার, আমি হলাম কাজলরেখা। আমি আপনাকে গত ১২ বছর ধরে সেবা করে সুস্থ্য করেছি। আর ও হল কঙ্কণদাসী। ওকে আমি আমার হাতের কঙ্কণ দিয়ে কিনেছি।” রাজকুমার সাবেক কঙ্কণদাসী ওরফে নতুন কাজলরেখাকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানালো। তারপর তাকে সাথে করে নিজে দেশে নিয়ে গেল। বিয়ে করে তাকে রাজরানী বানালো।

আমাদের কাজলরেখার কী হল জানতে চান তো?

কাজলরেখারা এভাবেই সারাজীবন খেটে যায়, শ্রম দেয়, নিজের জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক দিয়ে জান লড়িয়ে কাজ করে। আর দিনশেষে কঙ্কণদাসীরা চান্সে ছক্কা মেরে সেই ক্রেডিট ছিনতাই করে কাজলরেখা তথা হিরো বনে যায়।

গল্পের মাজেজা বহুমূখী। সে আরেকদিন হবে।

ওহ, সবকিছুতে ব্যক্তিগত গন্ধ খোঁজা ভাল নয়। পৃথিবী গোল।

Post a Comment

0 Comments