আসুন জেনে নিই এমপ্লয়ি কত ধরনের হতে পারে। by Ahsan Habib

এ গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলো জানা থাকলে প্রতিষ্ঠান ভীষণভাবে উপকৃত হবে এবং নিজের লিডারশিপকে এক অনন্য লেভেলে নেওয়া যাবে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত, চিন্তাভাবনা বা নিজের ভাষায় আরো দু-চার লাইন লিখে অন্যকে ও আমাকে হেল্প করতে পারেন। ধন্যবাদ।

১। অসচেতন শিশু এমপ্লয়ি:
 
এরা সাধারণত চাকুরীতে প্রথম যোগদান করে যাদের চাকুরীর পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা নেই। অর্থাৎ ছাত্রজীবনেও তাদের চাকরির কোন অভিজ্ঞতা নেই বা ছাত্রজীবনেও কোন পার্ট টাইম জব করে নাই। তারা বেশিরভাগই মনে করে আকাশ হচ্ছে তার একমাত্র লিমিট।
 
সাধারনত তাদের অনেকের মধ্যেই কোন ক্যারিয়ার গোলস্ বা টার্গেট জানা নেই, ভিশন ক্লিয়ার নয়। তাই অনেকেই অল্পতেই ভেঙে পড়ে। ফলে কিছুদিন পরপর তারা ঘনঘন চাকরি পরিবর্তন করার টেন্ডেন্সি থাকে।

তাদের অফিস পলিটিক্স এর ব্যাপারে তেমন কোন জ্ঞান থাকেনা। তাই কেউ ষড়যন্ত্র করলে কিংবা তার পেছনে লাগলে সে বুঝতে পারে না। তার ক্ষতি হয়ে থাকে।
 
তারা সাধারনত কিউরিয়াস মাইন্ডের হয়, অনেক কিছুই তাদের করতে মন চায়, জানতে মন চায়। এই কিউরিসিটির জন্যে তারা অনেক সময় অনেক ভুল করে থাকে। তাদের সঠিক গাইডলাইন না দিলে তাদের ভুলের কারণে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এদের সঠিক গাইডলাইন এর মাধ্যমে সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলে তাদের নিজ ক্যারিয়ার ও কোম্পানির বা প্রতিষ্ঠানের প্রফিটাবিলিটি বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাদেরকে সঠিক গাইডলাইন, লিডারশিপের মাধ্যমে যোগ্য লিডার হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এখানে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের এবং রিপোর্টিং বসের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
 
২। সচেতন শিশু এমপ্লয়ি:

এরা সাধারণত চাকুরীতে প্রথম যোগদান করে যাদের চাকুরীর পূর্ব পার্ট টাইম জবের অভিজ্ঞতা আছে। অর্থাৎ ছাত্রজীবনে তারা পার্ট টাইম জব করেছে। তারা বেশিরভাগই মনে করে আকাশ হচ্ছে তার একমাত্র লিমিট। তাদের সবার মধ্যেই ক্যারিয়ার গোলস্ বা টার্গেট জানা থাকে, ভিশন ক্লিয়ার আছে। তাই তারা অল্পতেই ভেঙে পড়ে না। ফলে কিছুদিন পরপর তারা ঘনঘন চাকরি পরিবর্তন করার টেন্ডেন্সি থাকে না।

তাদের অফিস পলিটিক্স এর ব্যাপারে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে। তাই কেউ ষড়যন্ত্র করলে কিংবা তার পেছনে লাগলে সে বুঝতে পারে এবং প্রোটেক্ট করতে পারে। বা প্রটেক্ট করতে না পারলে বর্তমান প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য কোন জায়গায় ভাল অপশন খুঁজতে থাকে।


সাধারণত তাদের কমিউনিকেশন স্কিল ভালো থাকে যেহেতু তারা পূর্বে কাজ করেছে। সাধারণত তারা গুড লার্নার হয়ে থাকে।
 
এদের সঠিক গাইডলাইন এর মাধ্যমে সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলে তাদের নিজ ক্যারিয়ার ও কোম্পানির বা প্রতিষ্ঠানের বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাদেরকে সঠিক গাইডলাইন, লিডারশিপের মাধ্যমে যোগ্য লিডার হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এখানে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান এবং রিপোর্টিং বসের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

৩। লোকসানকারি এমপ্লয়ি:

এরা সাধারণত খুব নিম্নমানের যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। এদের কমিউনিকেশন স্কিল মারাত্মকভাবে দুর্বল। তাদের কম্পিটেন্সি খুব নিম্নমানের এবং প্রতিষ্ঠানে এদের কোন কনট্রিবিউশন নেই।

এরা সাধারণত প্রতিষ্ঠানে এসে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকে এবং ঐ প্রতিষ্ঠানের অর্পিত দায়িত্ব, কর্তব্য গুলো কে এড়িয়ে চলে। এরা খুব স্বার্থপর টাইপের মানুষ হয়ে থাকে।
 
তাদের কোন গাইডলাইন দিলে কিংবা ভালো কিছু করার জন্য অনুপ্রাণিত করলে এই কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়।
 
এরা লার্নিং-এ একদম বিশ্বাসী নয়।

এরা কোম্পানির কন্টিনিউয়াসলি ক্ষতি সাধন করে থাকে কাজ ফাঁকি দিয়ে। এদের কোন ক্যারিয়ার গোলস, টার্গেট মিশন, ভিশন নেই। আবার নিজেকে বড় মনে করে।


৪। এভারেজ এমপ্লয়ি:

এরা সবখানে এভারেজ। মানে এদের স্কিল এভারেজ, এদের কম্পিটেন্সি এভারেজ, এদের পারফরম্যান্স এভারেজ। এদের প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিতে কন্ট্রিবিউশন এভারেজ। এদের পারফরম্যান্স, কম্পিটেন্সি, স্কিল আরো উন্নত করতে বললেও এরা এভারেজ থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

এমনকি এদের স্বপ্নও এভারেজ। এভারেজ ভাবে এরা বেঁচে থাকতে পছন্দ করে। পরিবার কোনরকম খেয়ে পড়ে এভারেজ অবস্থায় থাকুক এমন চিন্তা করে। নিজের উন্নতির কথা বললে এভারেজ হিসেবেই চিন্তা করে।

এরা পরিবর্তন ও লার্নিং-এ এভারেজ।

এরা অনেকেই স্বীকার করে যে আমার কোম্পানিতে বা প্রতিষ্ঠান ভূমিকা বা কন্ট্রিবিউশন এভারেজ আবার অনেকেই এটা স্বীকার করে না।

তাদের ক্যারিয়ার গোলস্ বা টার্গেটও এভারেজ।


৫। সিক্রেট ট্যালেন্ট এমপ্লয়ি:

এদের মধ্যে একরকম সিক্রেট ট্যালেন্ট থাকে। এরা সাধারণত হঠাৎ করেই বিশাল একটি সমস্যার সমাধান করে প্রতিষ্ঠানের হইচই ফেলে দেয়। তবে এই যে হঠাৎ করে সমস্যাটা সমস্যাটির সমাধান করল, এটা কিন্তু একদিনের এচিভমেন্ট নয় সে দীর্ঘদিন এটি নিয়ে কাজ করেছে। সমস্যাটির সমাধান কি কি হতে পারে সেটার এনালাইসিস করেছে, মেধা, শ্রম ও সময় ইনভেস্ট করেছে। এবং অবশেষে সমস্যাটির সমাধান সফলভাবে করেছে। এর ফলে কোম্পানির বা প্রতিষ্ঠানের একটি বড় ধরনের উপকার হয়ে থাকে। এরা কোম্পানির জন্য এক বিশাল অ্যাসেট।
 
তাদের সবার মধ্যেই ক্যারিয়ার গোলস্ বা টার্গেট জানা থাকে, ভিশন ক্লিয়ার আছে।

সাধারণত তারা ভেরি গুড লার্নার হয়ে থাকে। এদের কমিউনিকেশন স্কিল ভালো হয়ে থাকে। এদের লিডারশিপের কারণেই প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যায়।

এদের মেধার মূল্যায়ন ঐ প্রতিষ্ঠানটি না করতে পারলে, এরা অন্য আরেকটি কোম্পানিতে বা প্রতিষ্ঠানে ঠিকই সঠিক পজিশন খুঁজে নেয়।

৬। ট্রাভেলার এমপ্লয়ি:

এরা সাধারণত খুব ঘনঘন চাকরি পরিবর্তন করে। কারণ এদের ক্যারিয়ার গোলস্ ও টার্গেট জানা নেই বা জানা থাকলেও সে তার মূল্য বোঝেনা, ভিশন ক্লিয়ার না।
 
সাধারণত এরা ছয় মাস থেকে দু'বছরের মধ্যে চাকরি পরিবর্তন করতে পারে। শেষের জীবনে ট্রাভেলার এমপ্লয়ি ভালো জীবন যাপন করতে পারে না। বেশি জব পরিবর্তন করতে করতে কোন এক সময় তারা বিপদেও পড়ে। আর সেটি ক্যারিয়ারের শেষ স্টেজে হয়ে থাকে।

৭। ডিট্র্যাক্টর বা নিন্দুক এমপ্লয়ি:

এরা সবকিছুতেই অন্যকে দোষারোপ করতে অভ্যস্ত। নিজের উন্নতি হচ্ছে না, নিজেকে উন্নত করতে হবে সে বিষয়ে একদম খেয়াল করেনা তারা। বরং তারা কোম্পানিকে দোষারোপ করে বা প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করে-যে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি তাদের ক্যারিয়ারে ভ্যালু অ্যাড করতে পারছে না। তারা ভাবে, তারা ভীষণ পরিশ্রম করে কিন্তু কোম্পানি তাদের রিওয়ার্ড বা রিটার্ন দিচ্ছে না। তারা সবকিছুতেই অন্যকে দোষারোপ করতে ভালোবাসে।

এরা লার্নিং এ বিশ্বাসী নয়।

এদের লিডারশীপ কোয়ালিটি মারাত্মকভাবে দুর্বল।

এদের কোন ক্যারিয়ার গোলস্ বা টার্গেট নেই।

এরা এতটাই নিন্দা, পরচর্চা ও দোষারোপ নিয়ে ব্যস্ত, নিজেকে নিয়ে, নিজেকে ডেভেলপ করা নিয়ে চিন্তা করার সময় তাদের থাকে না।

৮। গুড জব এমপ্লয়ি:

এরা এমন ধরনের এমপ্লয়ি যাদের অসংখ্য ভালো গুণ রয়েছে। এরা কাজকে ভালোবাসি, ওয়ার্কিংপ্লেস কে রেসপেক্ট করে, ওয়ার্কিং আওয়ার কে সম্মান করে। এরা নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলে। এদের প্রোডাক্টিভিটি খুব ভালো।
তারা অন্যকে প্রশংসা করতে জানে। তারা কলিগ, কাস্টমার, স্টেকহোল্ডার সবাইকে সম্মান করে।

এরা মিথ্যা ও অফিস পলিটিক্স কে ঘৃণা করে। যদি তাদের বর্তমান অফিসে পলিটিক্স ও মিথ্যার মাত্রা বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে সহজেই এরা চাকরি পেয়ে থাকে।

এদেরকে সবাই টিমে চায় কারণ তারা পারফর্মার, তারা বিনয়ী।
 
এরা ভেরি গুড লার্নার, তারা ছোট-বড় সবার কাছ থেকে শিখতে পছন্দ করে। তারা পরিবর্তনে বিশ্বাসী এবং তাদের লিডারশিপ দেখার মত, উদাহরণ দেওয়ার মতো। এরা পজিটিভ যে কোন পরিবর্তনকে স্বাগত জানাই এবং মেনে নেয়। তারা প্রতিনিয়ত নিজেকে টেকনোলজির সাথে আপডেট করে, প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিবর্তন করে, প্রতিনিয়ত নিজেকে স্কিলড এমপ্লয়ি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করে।

এদের কমিউনিকেশন স্কিল খুব ভালো।
 
এদের সুনির্দিষ্ট ক্যারিয়ার গোলস্ ও টার্গেট জানা আছে।

৯। শর্টকাট এমপ্লয়ি:

এরা শর্টকাটে উপরের পজিশনে যেতে চায়। শর্টকাটে নিজের পজিশন কে শক্ত করতে চায়। তাই অন্যকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া কিংবা নোংরা অফিস পলিটিক্স মেতে ওঠে এরা। এরা শর্টকাটে উপরে উঠতে চায় বিধায় এদের প্রকৃত জ্ঞান আহরণ করে না বা নিজেকেই স্কিলড এম্প্লয়ি হিসাবে গড়ে তুলতে নারাজ। তাই তারা কাগজ নির্ভর সার্টিফিকেট বা ডিগ্রী নিতে খুব আগ্রহী এবং সাধারণত এসব কাগজ নির্ভর ডিগ্রী নিয়ে নিজেকে বড় ভাবতে থাকে। তাই ভুলক্রমে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ভালো পজিশন দিয়ে দেয়, যেহেতু তাদের অসংখ্য কাগজ নির্ভর সার্টিফিকেট বা ডিগ্রী রয়েছে। কিন্তু যখন ঐ প্রতিষ্ঠান জানতে পারে তখন তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে যায়।

আসলে শর্টকাট এর সকল পন্থা তারা খুব ভালো করে আয়ত্ত করে যাতে তাড়াতাড়ি উপরে ওঠা যায়।

কোম্পানিতে বা প্রতিষ্ঠানে এদের ভূমিকা বা কন্ট্রিবিউশন নেই বললেই চলে।
 
এরা কোম্পানির কন্টিনিউয়াসলি ক্ষতি সাধন করে থাকে কাজ ফাঁকি দিয়ে। এদের কোন ক্যারিয়ার গোলস, টার্গেট মিশন, ভিশন আছে এবং সেগুলো শর্টকাটে achieve করতে চায়। সবসময় নিজেকে বড় মনে করে।
এরা লার্নিং এ বিশ্বাসী নয়।

এদের লিডারশীপ কোয়ালিটি খুব দুর্বল।
 
এদের ক্যারিয়ার গোলস্ বা টার্গেট জানা আছে এবং সেগুলো achieve করার জন্য সকল শর্টকাট পন্থাও তারা জানে।

এরা প্রতিষ্ঠানের জন্য হুমকি স্বরূপ, বিপদজনক।








Post a Comment

0 Comments