অগ্নিকাণ্ডের
ঘটনা প্রতিরোধে বিভিন্ন ভবনে লাল রঙয়ের একটি সিলিন্ডার জাতীয় যন্ত্র থাকে যা
ব্যবহার করলে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ সম্ভব হবে অনেকাংশে। আগুন নেভানো বা নিয়ন্ত্রণে
রাখার জন্য ব্যবহৃত এই যন্ত্রকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বা ফায়ার এক্সটিংগুইশার বলা
হয়। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোতে সাধারণত সিলিন্ডারে উচ্চচাপে রক্ষিত তরল কার্বন
ডাই-অক্সাইড স্প্রে আকারে বের করে আগুন নেভানো হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা অনেকেই
এই যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার জানিনা। অথচ অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে এর ব্যবহার জানা আবশ্যক।
অগ্নিকাণ্ডের
ঘটনা ঘটলে তাড়াহুড়ো না করে সতর্কতার সাথে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রটি নির্ধারিত স্থান
থেকে ক্যারি হ্যান্ডেল ধরে নামাতে হবে। অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রটি নিয়ে আগুনের কাছে
গিয়ে এর সেফটি লক ও সেফটি পিন টান দিয়ে খুলতে হবে। যন্ত্রটি নিয়ে বাতাসের অনুকূলে
দাঁড়াতে হবে, এরপর বাম হাত দিয়ে ডিসচার্জ পাইপের নলটি আগুনের উৎসের দিকে টার্গেট
করতে হবে। পাশাপাশি ডান হাত দিয়ে ক্যারি হ্যান্ডেল ধরে নলটি আগুনের উৎসের দিকে তাক করতে হবে।
এর অপারেটিং লিভার চাপ দিলেই অগ্নি নির্বাপক পদার্থ বের হবে। আগুন সম্পূর্ণ না নেভা
পর্যন্ত সেটি আগুনের দিকে তাক করে ধরে রাখতে হবে।
ফায়ার
এক্সটিংগুইশার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতাও অবলম্বন করতে হবে। যেমন-
১)
ফায়ার এক্সটিংগুইশার ফ্লোর থেকে অন্তত পাঁচ ফুট উপরে সেট করতে হবে যাতে সেটি
বাচ্চাদের নাগালের বাইরে থাকে।
২)
ফায়ার এক্সটিংগুইশার কখনো তালাবদ্ধ করে রাখা যাবে না।
৩)
মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই সেটিকে পুনরায় সচল এবং কার্যক্ষম করতে হবে।
ফায়ার
এক্সটিংগুইশারগুলোকে সাধারণত এ, বি, সি ক্লাসে ভাগ করা হয় যা নির্দেশ করে যে কোনো
ধরণের আগুনে আপনি এটিকে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিটি যন্ত্রের গায়েই এর ক্লাস উল্লেখ
করা থাকে। বর্তমানে অনেক ফায়ার এক্সটিংগুইশারই রয়েছে যেগুলো এ বি সি ক্লাস। অর্থাৎ
তিনটি ক্লাসের আগুনেই এগুলোকে ব্যবহার করা যাবে।
এ
ক্লাসঃ এ ক্লাসের ফায়ার এক্সটিংগুইশারগুলোকে কাঠ, কাগজ কিংবা কাপড়-চোপড় এ লাগা
আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা যাবে।
বি
ক্লাসঃ বি ক্লাসের এক্সটিংগুইশারকে লিকুইডের আগুন যেমন গ্যাসোলিন কিংবা তেল থেকে
সৃষ্ট হওয়া আগুনে ব্যবহার করা যাবে।
সি
ক্লাসঃ সি ক্লাসের এক্সটিংগুইশারগুলো বিদ্যুৎ থেকে সৃষ্ট হওয়া আগুন নেভানোর কাজে
ব্যবহৃত হয়।
ফায়ার
এক্সটিংগুইশার কেনার ক্ষেত্রে এর সাইজ বিবেচনা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বড়
এক্সটিংগুইশারগুলো বেশি আগুন নেভানোর ক্ষমতা রাখে। কিন্তু বেশি ওজন হওয়ার কারণে
সেগুলোকে মেইনটেইন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কাজেই যতটুকু বড় সম্ভব, যেটি নিয়ন্ত্রণ
করা সম্ভব হবে সহজে, সেরকম অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রই স্থাপন করা উচিত।
বিভিন্ন
সাইজের ফায়ার এক্সটিংগুইশার:
১০
পাউন্ডঃ এগুলো গ্যারেজ কিংবা বাসার নিচের ওয়ার্কশপের জন্য ভালো। যেখানে আগুন খুব
তাড়াতাড়ি নজরে আসেনা এবং মোটামুটি বড় আকার ধারণ করে।
৫
পাউন্ডঃ এই এক্সটিংগুইশারগুলো রান্নাঘর কিংবা লন্ড্রি রুমের জন্য উপযুক্ত।
২
পাউন্ডঃ দুই পাউন্ডের এক্সটিংগুইশারগুলো সাধারণত গাড়িতে ব্যবহৃত হয়।
বিভিন্ন
ধরণের আগুনের জন্য বিভিন্ন রকমের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। ভুল রকমের
অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহারের ফলে আগুন আরও বাড়তে পারে তাই সঠিক ধরণের
অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করা উচিত।
0 Comments