মধু হলো প্রাকৃতিক
অ্যান্টিসেপটিক। তাই পোড়া যায়গায় মধু লাগালে জীবাণু নিধন করে ইনফেকশনের
ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ও দ্রুত শুকাতে সহায়তা করে। মধু ক্ষত দ্রুত আরোগ্য করবে ও
দাগও হবে না ত্বকে। চা পাতায় আছে ট্যানিক এসিড যা ত্বককে শীতল করে। তাই
পোড়া স্থানে ভেজা, ঠাণ্ডা টি ব্যাগ ব্যবহার করলে ত্বকের জ্বালা ভাব ও
অস্বস্তি অনেকটাই কমে যায়। ভিনেগারের সাথে সম পরিমাণে পানি মিশিয়ে পোড়া
ক্ষত স্থানটি ধুয়ে নিন। দ্রুত ব্যথা কমবে।
রাঁধতে গিয়ে কিংবা হঠাৎ অসাবধানতা বশত আমাদের প্রায় সবারই কখনো না কখনো হাত
পুড়ে যায়। অনেক সময় আবার গরম পানি কিংবা গরম কোনো খাবার পুরোটাই পড়ে যায়
আমাদের পায়ে কিংবা শরীরে। আবার পাতিল বা কড়াই ধরতে গিয়ে হাতে ছ্যাকা লাগে।
সিগারেটের আগুনেও হাত পুড়ে যায় অহরহ। আর হাত পুড়ে গেলেই শুরু হয় অসহ্য
যন্ত্রণা ও জ্বালা পোড়া। কিছুক্ষনের মধ্যেই পোড়া স্থানটিতে ফোসকাও দেখা
যায়। বেশিরভাগ মানুষই জানেন না পুড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে কী করলে আরাম মিলবে।
আর তাই বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারনাবশত এটা ওটা করে পোড়ার ক্ষত আরো বাড়িয়ে ফেলেন।
পুড়ে যাওয়ার আছে বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকার যেগুলো নিমিষেই আরাম দেয় ও
জ্বালা পোড়া ভাব কমিয়ে দেয়। আসুন জেনে নেয়া যাক আগুনে পোড়ার ঘরোয়া
প্রতিকারগুলো।
ঠান্ডা পানি
পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পোড়া স্থানটি কয়েক মিনিট ধরে ঠান্ডা পানি দিয়ে
ধুয়ে নিন। পুড়ে যাওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলে
বেশি উপকার পাওয়া যায়। ঠান্ডা পানি পোড়া জায়গার জ্বালা পোড়া কমিয়ে দেয় এবং
ফোসকা পড়ার ঝুঁকি কমায়। প্রতি দুই তিন ঘন্টা পর পর আক্রান্ত স্থানটি ঠান্ডা
পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ঠান্ডা পানির বদলে ঠান্ডা দুধও ব্যবহার করতে পারেন।
তবে পোড়া স্থানে বরফ ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ বরফ পোড়া স্থানের রক্ত
চলাচল বন্ধ করে দিয়ে পোড়া স্থানের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
মধু
আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থানে মধু দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্বালা পোড়া ভাব কমে
যায়। মধু হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক। তাই পোড়া যায়গায় মধু লাগালে জীবাণু
নিধন করে ইনফেকশনের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ও দ্রুত শুকাতে সহায়তা করে। একটি
পরিষ্কার পাতলা সুতি কাপড় বা গজে মধু লাগিয়ে নিন। এবার পোড়া যায়গায় মধু
লাগানো কাপড়টি বেঁধে রাখুন। দিনে ৩ থেকে ৪ বার কাপড়টা বদলে দিন। এই পদ্ধতি
অনুসরণ করলে পোড়ার ক্ষত দ্রুত ভালো হবে এবং দাগ হবে না।
টি ব্যাগ
শরীরের কোনো অংশ যখন সামান্য পুড়ে যায় তখন টি ব্যাগ আপনাকে আরাম দেবে
অনেকটাই। চা পাতায় আছে ট্যানিক এসিড যা ত্বককে শীতল করে। তাই পোড়া স্থানে
ভেজা, ঠাণ্ডা টি ব্যাগ ব্যবহার করলে ত্বকের জ্বালা ভাব ও অস্বস্তি অনেকটাই
কমে যায়। পোড়া জায়গায় কয়েকটি ঠান্ডা ভেজা টি ব্যাগ ধরে রাখুন। টি ব্যাগ
গুলোকে পোড়া জায়গায় ধরে রাখার জন্য পাতলা সুতি কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। চা
পাতাও ব্যবহার করতে পারেন পোড়া যায়গায়। এই ক্ষেত্রে তিনটি টি ব্যাগের সম
পরিমাণ চা পাতা দিয়ে চায়ের লিকার বানিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এবার আক্রান্ত
স্থানে পরিষ্কার তুলো বা নরম কাপড় দিয়ে লিকারটি লাগান।
ভিনেগার
ভিনেগার হলো প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট ও অ্যান্টিসেপ্টিক। তাই পুড়ে যাওয়া
যায়গায় ভিনেগার ব্যবহার করলে বেশ আরাম পাওয়া যায়। ভিনেগারের সাথে সম
পরিমাণে পানি মিশিয়ে নিন। এবার এই ভিনেগার মেশানো পানি দিয়ে পোড়া জায়গা
কিংবা ক্ষত স্থানটি ধুয়ে নিন। এই মিশ্রণটি ব্যাথা কমিয়ে দেবে এবং ত্বকে
কিছুটা স্বস্তি মিলবে। ক্ষত স্থানে ভিনেগার লাগিয়ে উপরে একটি কাপড় বেঁধে
রাখতে পারেন। প্রতি দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পর কাপড়টা বদলে দিতে হবে।
অ্যালোভেরা
কোথাও পুড়ে গেলে অ্যালোভেরার তাজা রস বের করে পোড়া জায়গায় লাগিয়ে নিন।
অ্যালোভেরার আছে ব্যাথা কমানোর গুণ। পোড়া জায়গায় অ্যালোভেরা লাগিয়ে দিলে
কিছুক্ষণের মধ্যেই ত্বকে শীতল অনুভূতি পাওয়া যাবে এবং জ্বালা ভাব কমে যাবে।
প্রথমে পোড়া জায়গাটা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর এক টুকরো
অ্যালোভেরার পাতা থেকে তাজা রস বের করে পোড়া স্থানে লাগিয়ে নিন। এভাবে দিনে
বেশ কয়েকবার লাগান।
ডিমের সাদা অংশ
শরীরের যে স্থানে পুড়ে গেছে সেখানে ডিমের সাদা অংশ দিন। পোড়া জায়গার পরিমাণ
বুঝে একটি বা দুটি ডিমের সাদা অংশ লাগতে পারে। পোড়া স্থানে যতক্ষন ডিমের
সাদা অংশটা ভেজা ভেজা থাকবে ততক্ষণ জ্বালা পোড়া ভাব থাকবে না। শুকিয়ে গেলে
আবার জ্বলা শুরু হলে আরেকটি ডিমের সাদা অংশ লাগিয়ে নিন। ডিমের সাদা অংশ
পোড়া ক্ষত দ্রুত সারিয়ে দেয় এবং ত্বকে পোড়া দাগ পড়তে দেয় না।
0 Comments