পুড়ে যাওয়ার
ব্যাপারটি অনেকটাই দুর্ঘটনাবশত। আগুন লাগলেই অনেকে ভয় পেয়ে যান। ভয় না পেয়ে
কীভাবে একে মোকাবিলা করবেন, তা নিয়ে আজকের আলোচনা।
আগুন লাগলে যা করতে হবে
- আগুন দেখলে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে ধীরস্থির থাকুন। প্রথমে আগুনের উৎপত্তি কোথায়, সত্যিই আগুন লেগেছে কি না, এটি জানার চেষ্টা করুন। অযথা চিৎকার-চেঁচামেচি না করে প্রাথমিক অবস্থায় আগুন নেভানোর চেষ্টা করুন।
- তেলজাতীয় আগুনে কম্বল, কাঁথা, ছালা বা মোটা কাপড় ভিজিয়ে চাপা দিন।
- বৈদ্যুতিক আগুনে দ্রুত প্রধান সুইচ বন্ধ করুন। পরনের কাপড়ে আগুন লাগলে মাটিতে গড়াগড়ি দিন, ভুলেও দৌড়াবেন না। তাতে আগুন বেড়ে যাবে।
- বহুতল ভবনে আগুন লাগলে, পর্যায়ক্রমে ধীরেসুস্থে নেমে আসুন। হুড়োহুড়ি করে নামতে যাবেন না। আগুন ঊর্ধ্বমুখী, তাই ওপরতলায় আগুন লাগলে প্রথমে সেই তলার লোকজনকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দিন। ওপরের তলার পর নিচের দিকের তলার লোকজনকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দিন।
প্রাথমিক চিকিৎসা
শরীরের উপরিভাগের স্তর হচ্ছে ত্বক। আগুনে ত্বক পুড়ে গেলে চামড়া লাল হয়ে
যায়, সামান্য ফুলে যায় এবং জ্বালা করে। এ অবস্থাকে বলে প্রথম ডিগ্রি
বার্ন। এ ক্ষেত্রে পোড়ার স্থানে শুধু ১৫ থেকে ২০ মিনিট পানি ঢাললেই চলবে।
খুব বেশি জ্বললে একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে পারেন।
দুই ডিগ্রি বার্ন হলে ত্বকের উপরিভাগের প্রথম স্তর (এপিডার্মিস)
সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরবর্তী স্তর (ডার্মিস) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত
হয়। পুড়ে যাওয়া স্থান লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, ফোসকা পড়ে এবং
প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
সাধারণত গরম পানি বা গরম তরল কিছু পড়লে, কাপড়ে আগুন লেগে গেলে, মোমের গরম
তরল অংশ সরাসরি চামড়ায় লাগলে, আগুনে উত্তপ্ত কড়াইজাতীয় কিছুর স্পর্শে এ
ধরনের বার্ন হয়।
এ ক্ষেত্রে অনেকক্ষণ ধরে পানি ঢালতে হবে—এক-দুই ঘণ্টা পর্যন্ত। ফোসকা গলানোর চেষ্টা করবেন না।
তিন ডিগ্রি বার্ন হলে ত্বকের উপরিভাগের দুটি স্তরই (এপিডার্মিস ও ডার্মিস)
সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চামড়ার নিচে থাকা মাংসপেশি, রক্তনালি,
স্নায়ু ইত্যাদিও আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায়, চামড়া
পুড়ে শক্ত হয়ে যায়, স্পর্শ করলেও ব্যথা অনুভূত হয় না।
সরাসরি আগুনে পুড়লে, বিদ্যুতায়িত হলে, ফুটন্ত পানি বা তরল সরাসরি শরীরে
পড়লে বা বিস্ফোরণে এ ধরনের বার্ন হয়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত
দ্রুত সম্ভব আগুন বা গরম জায়গা থেকে সরিয়ে নিন। পুড়ে যাওয়া কাপড় খুলে
দিতে হবে। অযথা ডিম, টুথপেস্ট ইত্যাদি লাগাবেন না। এতে কোনো উপকার নেই।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে তার পুড়ে যাওয়া অংশ
খোলা দিকে থাকে। তার পর জগ বা মগে ঠান্ডা পানি বা বরফপানি এনে পোড়া
জায়গায় ঢালতে হবে, যতক্ষণ না তার জ্বালা-যন্ত্রণা কমে এবং ক্ষতস্থানের
গরমভাবও কমে না যায়। আক্রান্ত স্থানটি ফুলে যাওয়ার আগে সেখান থেকে ঘড়ি,
বেল্ট, আংটি, কাপড় ইত্যাদি যদি থাকে সেগুলো খুলে ফেলতে হবে। পুড়ে যাওয়া
অংশের কাপড় যদি লেগে থাকে, তবে সেটা না টেনে বাকি কাপড় কেটে সরিয়ে ফেলতে
হবে।
পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান হালকা করে বেঁধে
দিতে হবে। যদি মুখে কোথাও পুড়ে যায়, তবে পানি দিয়ে ঠান্ডা করতে হবে
যতক্ষণ না ক্ষতস্থান ঠান্ডা হয় এবং ব্যথা কমে। মুখ ঢাকার প্রয়োজন নেই,
তবে পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে এমনভাবে মাস্ক তৈরি করতে হবে, যাতে
নাক, মুখ ও চোখ বের করে মুখ ঢাকা যায়। সিলভার সালফাডায়জিন ক্রিম হাতের
কাছে থাকলে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে লাগিয়ে দিতে হবে।
আক্রান্ত অংশ পরিষ্কার কাপড় বা গজ-ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে একটু উঁচু করে ধরে
রাখুন। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান থাকলে পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে স্যালাইন বা
শরবত করে খেতে দিন অথবা ডাবের পানি বা খাওয়ার পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান
করতে দিন।
প্রাথমিক চিকিৎসা চালানো অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিন।
লেখক : ডা. কামরুল আক্তার সঞ্জু আবাসিক সার্জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
0 Comments