আগুন, কিভাবে নিজে বাঁচবেন এবং অন্যকে বাঁচাবেন | রণদীপম বসু


bangladesh_news_03142009_000001_02_basundhora 
আগুন, যার একটাই গুণ- কেবল জ্বালাতেই জানে। এবং এই অগ্নিক্ষুধা এতোটাই একপাক্ষিক ঘটনা যে, জান-মাল সহ কিছুই আর অবশিষ্ট রাখে না। প্রতিবছর আমাদের দেশে আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডে কী পরিমাণ জান-মালের ক্ষতি হয় তার কোন পরিসংখ্যানমূলক তথ্য হাতের কাছে না থাকলেও নাগরিক জীবনে এর ভয়াবহতা ও ভিকটিম হিসেবে আমাদের অসহায়তার অন্ত নেই। বাসা-বাড়ি অফিস-আদালত থেকে শুরু করে মার্কেট-বহুতল ভবন যান-বাহন ইত্যাদি প্রায় সকল ক্ষেত্রে অগ্নি নির্বাপক সিস্টেমের অভাব বা অপ্রতুলতা এবং আমাদের ভয়ানক অজ্ঞতা-অসচেতনতার কারণে যেকোন সময় যেকোন স্থানে যে কেউ এই আগ্রাসী অগ্নিকাণ্ডের দুঃখজনক ট্র্যাজেডির অসহায় শিকার হয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। গ্রামে-গঞ্জে বা ছোটখাটো শহরগুলোতে হুট করে বাইরে খোলা জায়গায় বেরিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচানোর ছোট্ট সুযোগটুকু পাওয়া গেলেও খাঁচাবদ্ধ নাগরিক জীবনে সেটাও সুদূরপরাহত বলেই মনে হয়। তাই প্রতিমুহূর্তের সমূহ আশঙ্কা আর সম্ভাব্য বিপদ মাথায় নিয়েই আমাদের নাগরিক জীবন।

ইদানিংকালে ঢাকার কিছু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা-উত্তর পরিস্থিতি থেকে আমাদের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হচ্ছে, আগুনে পুড়ে মরার চাইতে বহুগুণ বেশি মৃত্যু ঘটে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ঠ হয়ে। বিশেষ করে কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির অনাকাঙ্ক্ষিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা তা লক্ষ্য করলাম। আবার নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড যে আমাদেরই বালখিল্য অসতর্কতা ও অবিবেচনাপ্রসূত অসচেতনতার ফসল তাও বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে করে আগুনের তীব্রতার চাইতেও আমাদের অজ্ঞতা-অসচেতনতাই অধিক তীব্র বলে অনুমিত হয়। এছাড়া বহুতল ভবনগুলোর অন্ধ-আবেগি নির্মাণশৈলিতে প্রয়োজনীয় বিল্ডিং কোড অমান্যের পাশাপাশি অত্যাবশ্যকীয় অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থার শোচনীয় ঘাটতি বা অনুপস্থিতি, আমাদের রাষ্ট্রিয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সংস্থার যুগোপযোগী প্রয়োজনীয় ইকুইপম্যান্ট সার্ভিস না থাকা, বিশেষ করে তেরো তলার উপরে অগ্নিনির্বাপণে তাদের অসহায় অক্ষমতায় (যা বসুন্ধরার অগ্নিকাণ্ডে লক্ষ্য করা গেছে) বহুতল ভবনশীর্ষবাসীদের স্রেফ অদৃষ্ট-নির্ভর হয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় আমাদের নাগরিক-যোগ্যতাকেই প্রশ্নের সম্মুখীন করে তুলেছে। এমতাবস্থায় আগুন সম্পর্কে আমাদের সতর্ক সচেতনতার কোন বিকল্প চোখে পড়ে না। একটু সচেতন হলেই আমরা অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রান পেয়ে যেতে পারি। অনেক ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডিরও দুর্ভাগা সাক্ষি হতে হয় না আমাদের। আসুন না, আমরা সে চেষ্টাটুকুই করতে পারি কিনা দেখি।

# প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ
একান্তই আগুনের সূত্রপাত ঘটে গেলে দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা তো নিতেই হবে। তবে আগুন থেকে বাঁচার শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ডের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও সচেতনতা সৃষ্টি। কী কী কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে তা যেমন জানা প্রয়োজন, তেমনি আগুনের ধর্ম, উৎস, স্বভাব ও অনুঘটকগুলো কী এবং আগুনের আগ্রাসী অবস্থায় পৌঁছার আগেই একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় কিভাবে আগুনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায়, সেগুলো অন্তত নিজের জন্য হলেও জেনে রাখা প্রত্যেক নাগরিকেরই আবশ্যিক কর্তব্য হওয়া উচিত। আর এটা ভুলে যাওয়াও ঠিক হবে না যে, আপনি নিজে যত সচেতনই হোন, আপনার পাশের ব্যক্তিটির অসচেতনতার কারণেও আপনি এবং আপনারা অনায়াসে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে যেতে পারেন। তাই নিজে সচেতন হলেই কাজ শেষ হয় না, অন্যকে সচেতন করাও আপনার আমার নাগরিক দায়িত্ব বৈ কি।

সম্প্রতি একটি ফায়ার-ফাইটিং কর্মশালায় স্বল্প সময়ের জন্য অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছিলো। এরই অভিজ্ঞতা থেকে আগুন সম্পর্কিত কিছু প্রাথমিক ধারণা ও নির্বাপণ পদ্ধতি এবং সতর্কতার বিষয়গুলো সবার সাথে শেয়ার করছি।

# কেন আগুন জ্বলে
আগুন জ্বলতে হলে তিনটি উপাদানের উপস্থিতি থাকা আবশ্যক- দাহ্য বস্তু (Fuel), অক্সিজেন (O2) ও তাপ (Heat)। এই তিনটি উপাদানের একত্র উপস্থিতি ছাড়া আগুন জ্বলতে পারে না। তাই এ তিনটি উপাদানের যে কোন একটি উপাদানকে অপসারণ করে বা বাধাগ্রস্ত করলেই অগ্নি নির্বাপণ হয়। এটাই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার মূল সূত্র।

সাধারণভাবে যেকোন স্থানে যেকোন অবস্থায়ই এই তিনটি উপাদানের পূর্ণ উপস্থিতি সবসময়ই রয়েছে। সর্বত্রই দাহ্যবস্তুর উপস্থিতি রয়েছে। অক্সিজেন, তাও সর্বব্যাপ্ত। আর সর্বাবস্থায় তাপ তো কম-বেশি আছেই। তাহলে আগুন জ্বলছে না কেন? এই সবকিছু থাকার পরেও আগুন না-জ্বলার একটাই কারণ, তাপাবস্থা দাহ্যবস্তুর জ্বলন বিন্দু বা ইগনিশন পয়েন্ট (Ignition point) ছুঁতে পারছে না। যতক্ষণ না তাপমাত্রা বস্তুর ইগনিশন পয়েন্ট স্পর্শ করবে ততক্ষণ আগুন জ্বলবে না। তাপমাত্রা যখনই বস্তুর ইগনিশন পয়েন্ট ছুঁয়ে ফেলে, তখনই আগুন জ্বলে ওঠে। বিভিন্ন বস্তু বা পদার্থের ইগনিশন পয়েন্ট ভিন্ন ভিন্ন। যেমন, কাঠের ইগনিশন পয়েন্ট ৩০২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, কয়লার ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, আবার ফসফরাসের ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ইত্যাদি। অর্থাৎ আগুন জ্বলার ক্ষেত্রে দাহ্য পদার্থের ইগনিশন পয়েন্টই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। কোন বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে ৪০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার সৃষ্টি হয় বলে আশেপাশের দাহ্য বস্তুতে সাথে সাথে আগুন জ্বলে ওঠে। নাগরিক জীবনে তাই বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলে না বলে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের অন্যতম ভয়ঙ্কর উৎস হিসেবেও সার্বক্ষণিক সাথি আমাদের।

সাধারণভাবে যেকোন স্থানে যেকোন অবস্থায়ই এই তিনটি উপাদানের পূর্ণ উপস্থিতি সবসময়ই রয়েছে। সর্বত্রই দাহ্যবস্তুর উপস্থিতি রয়েছে। অক্সিজেন, তাও সর্বব্যাপ্ত। আর সর্বাবস্থায় তাপ তো কম-বেশি আছেই। তাহলে আগুন জ্বলছে না কেন? এই সবকিছু থাকার পরেও আগুন না-জ্বলার একটাই কারণ, তাপাবস্থা দাহ্যবস্তুর জ্বলন বিন্দু বা ইগনিশন পয়েন্ট (Ignition point) ছুঁতে পারছে না। যতক্ষণ না তাপমাত্রা বস্তুর ইগনিশন পয়েন্ট স্পর্শ করবে ততক্ষণ আগুন জ্বলবে না। তাপমাত্রা যখনই বস্তুর ইগনিশন পয়েন্ট ছুঁয়ে ফেলে, তখনই আগুন জ্বলে ওঠে। বিভিন্ন বস্তু বা পদার্থের ইগনিশন পয়েন্ট ভিন্ন ভিন্ন। যেমন, কাঠের ইগনিশন পয়েন্ট ৩০২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, কয়লার ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, আবার ফসফরাসের ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ইত্যাদি। অর্থাৎ আগুন জ্বলার ক্ষেত্রে দাহ্য পদার্থের ইগনিশন পয়েন্টই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। কোন বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে ৪০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার সৃষ্টি হয় বলে আশেপাশের দাহ্য বস্তুতে সাথে সাথে আগুন জ্বলে ওঠে। নাগরিক জীবনে তাই বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলে না বলে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের অন্যতম ভয়ঙ্কর উৎস হিসেবেও সার্বক্ষণিক সাথি আমাদের।

1242664145fire_types_all

# আগুনের ধরন (Types of fires)
প্রকারভেদে অগ্নিকাণ্ড চার (৪) ধরনের হয়ে থাকে- কঠিন আগুন, তরল আগুন, গ্যাসীয় আগুন ও ধাতব আগুন। কেউ কেউ বৈদ্যুতিক আগুন নামে আরেকটি ধরনের উল্লেখ করেন। আসলে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুন রূপান্তরিত হয়ে কঠিন, তরল, গ্যাসীয় বা ধাতব আগুনেই পরিণত হয়ে থাকে।
(১) কঠিন পদার্থের আগুন (Solid fire) : কঠিন পদার্থের আগুন, যেমন- কাঠ, বাঁশ ইত্যাদির আগুন।
(২) তরল পদার্থের আগুন (Liquid fire) : তরল পদার্থের আগুন, যেমন- তেল, পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদির আগুন।
(৩) গ্যাসীয় পদার্থের আগুন (Gas fire) : গ্যাসীয় পদার্থের আগুন, যেমন- গ্যাস লাইন, গ্যাসের চূলার আগুন ইত্যাদি।
(৪) ধাতব পদার্থের আগুন (Metal fire) : ধাতব পদার্থের আগুন, যেমন- সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদির আগুন।

# অগ্নি নির্বাপণ (Fire Fighting)
অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা হচ্ছে আগুনের ধরন বুঝে তা নেভানোর ব্যবস্থা নেয়া। আগুন জ্বলার ক্ষেত্রে আবশ্যক তিনটি উপাদানের কথা আমরা আগেই জেনেছি- দাহ্যবস্তু, অক্সিজেন ও তাপ। আগুনের সূত্রপাত ঘটে যাওয়া মানে দাহ্যবস্তু আগুনে আক্রান্ত হয়ে গেছে। অতএব তখন বাকি যে দুটো উপাদান অক্সিজেন ও তাপ, তার যেকোন একটি উপাদানকে অপসারণ বা বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে অগ্নি নির্বাপণ প্রক্রিয়া পরিচালিত করতে হয়। কোন্ উপাদানটিকে অপসারণ করতে হবে তা নির্ভর করে আগুনের ধরনের উপর।

(১) কঠিন পদার্থের আগুন (Solid fire) নির্বাপণ : এ ধরনের আগুনের ক্ষেত্রে অক্সিজেন বা তাপ এর যে কোনো একটি উপাদানকে অপসারণ বা বাধাগ্রস্ত করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। পানি ছিটিয়ে দাহ্যবস্তুর তাপমাত্রা কমিয়ে এ আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাছাড়া ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার, ফোম, কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ব্যবহার করে দাহ্যবস্তুতে অক্সিজেন সরবরাহে বাঁধা প্রদান করেও আগুন নেভানো যায়।

(২) তরল পদার্থের আগুন (Liquid fire) নির্বাপণ : এ ধরনের আগুনের তাপ অপসারণের সুযোগ নেই বলে পানি দ্বারা তা নেভানো যায় না। বরং তৈলাক্ত তরলের আপেক্ষিক ওজন পানির চেয়ে হালকা বলে পানি ব্যবহার করলে পানিতে ভেসে এ আগুন আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে দাহ্যবস্তুতে অক্সিজেন সরবাহে বাধাগ্রস্ত করাই আগুন নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায়। তাই এ আগুনে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ও ফোম বেশি কার্যকর। ড্রাই পাউডার দ্বারাও নেভানো যায়।

(৩) গ্যাসীয় পদার্থের আগুন (Gas fire) নির্বাপণ : এ ধরনের আগুনে পানি অকার্যকর। ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার, ফোম, কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়।

(৪) ধাতব পদার্থের আগুন (Metal fire) নির্বাপণ : ধাতব পদার্থের আগুন পানিতে নেভানো যায় না। ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার, ফোম, কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ব্যবহার করেই এ আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এ ধরনের আগুনে পানি ব্যবহার হিতে বিপরীত ঘটে, আগুনের তীব্রতা বহুগুণে বেড়ে যায়। কারণ, ধাতব পদার্থে পানি (H2O) রাসায়নিক বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন (H) ও অক্সিজেনে (O2) রূপান্তরিত হয়। উৎপাদিত হাইড্রোজেন (H) নিজেই জ্বলে আর অক্সিজেন (O2) আগুন জ্বলতে সাহায্য করে।

# অগ্নি নির্বাপণের বিভিন্ন পদ্ধতি
পানি ছিটিয়ে দাহ্যবস্তুর তাপমাত্রা কমিয়ে অগ্নি নির্বাপণ করা যায়। অথবা কেমিক্যাল ব্যবহার করে আগুনের উপর কৃত্রিম স্তর সৃষ্টি করে অক্সিজেন সরবরাহে বাধা প্রদান করে অগ্নি নির্বাপণ করা যায়। কিংবা দাহ্যবস্তুকে অপসারণ করে অগ্নি নির্বাপণ করা যায়। তবে আগুনের ধরনের উপর নির্ভর করেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয়। অগ্নি নির্বাপণের প্রধান পদ্ধতি দুটো-

(১) পানি প্রয়োগ করে অগ্নি নির্বাপণ : পাত্র দিয়ে পানি বহন ও ছিটিয়ে অগ্নি নির্বাপণের সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নব ঘুরিয়ে আগুনের উৎপত্তিস্থলে প্রবলবেগে পানি স্প্রে করা। যেমন- ফায়ার হাইড্রেন্ট বা স্প্রিংকলার সিস্টেম।
 firehydrant

ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবহার পদ্ধতি : মূলত দ্রুতবেগে পানি স্প্রে করার ব্যবস্থাই ফায়ার হাইড্রেন্ট। এ ব্যবস্থায় মাটির নিচে জলাধার তৈরি করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুইটি পাম্প (ফায়ার পাম্প ও জকি পাম্প) দ্বারা এই ফায়ার হাইড্রেন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সরবরাহ সার্বক্ষণিকভাবে সচল রাখা হয়।
 hpm_0000_0004_0_img0081

এই ফায়ার হাইড্রেন্ট দ্বারা দ্রুতবেগে পানি স্প্রে করা যায়। ফায়ার হাইড্রেন্টের মুখ সাধারণত বাড়ি বা ভবনের খোলা লনে নিরাপদ স্থানে বসানো হয় যাতে প্রয়োজনমতো হাইড্রেন্টের পানি নির্গমন মুখে হোস পাইপ লাগিয়ে নব ঘুরিয়ে ইচ্ছেমতো পানি স্প্রে করা যায়। অধিক নিরাপত্তার কারণে বহুতল ভবনের প্রতি ফোরে সিঁড়ির পার্শ্বে বা নির্দিষ্ট স্থানে দেয়ালে হোস পাইপ সংযুক্ত ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা থাকতে হয়, যাতে প্রয়োজনে হোস পাইপ ভবনের যে কোন প্রান্ত পর্যন্ত সহজে বহন করা যায়। এতে করে বড় ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনায় হোস পাইপের নব ঘুরিয়ে প্রবল বেগে পানি স্প্রে করে অগ্নি নির্বাপণ করা সম্ভব হয়।

(২) কেমিক্যাল ব্যবহার করে অগ্নি নির্বাপণ : ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার (DPC), কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2), কেমিক্যাল ফোম ব্যাবহার হচ্ছে অগ্নি নির্বাপণের প্রাথমিক পদক্ষেপ। এই কেমিক্যালগুলো ফায়ার এক্সটিংগুইসার সিলিন্ডারের ভেতরে কমপ্রেসড্ অবস্থায় থাকে। প্রয়োজনের সময় হাতল চেপে আগুনের উপর প্রয়োগ করে সহজেই অগ্নি নির্বাপণ করা যায়। প্রাথমিক অবস্থাতেই আগুন নেভানোর প্রয়োজনে প্রত্যেক ব্যক্তিরই এই ফায়ার এক্সটিংগুইসার (Fire Extinguisher) ব্যবহার পদ্ধতি জেনে রাখা আবশ্যক।
 left-1

ফায়ার এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ পদ্ধতি : প্রাথমিক অবস্থাতেই আগুনের উপর ফায়ার এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ করতে হয়। ফায়ার এক্সটিংগুইসার সিলিন্ডারের হ্যান্ডেল ডান হাতে ধরে বাঁ হাত দিয়ে টান মেরে সেফটি পিনটাকে খুলে ফেলে বাম হাতে হোস পাইপ আগুনের দিকে তাক করে ডান হাতের আঙুল দিয়ে বাটন বা লিভার চাপতে হয়।
 cutaway

ফায়ার এক্সটিংগুইসার সর্বদাই বাতাসের অনুকূলে থেকে প্রয়োগ করতে হয়, যাতে কেমিক্যাল পাউডার বা গ্যাস বা ফোম উড়ে এসে নিজের গায়ে না পড়ে। আগুনের উৎপত্তিস্থলের সর্বোচ্চ ২ মিটার দূর থেকে ফায়ার এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ করতে হয়। আগুন ছোট অবস্থায় থাকতে ফায়ারম্যানের অপেক্ষায় না থেকে হাতের কাছে থাকা ফায়ার এক্সটিংগুইসার দ্বারা প্রাথমিক অবস্থায় নিজেই অগ্নি নির্বাপণ করা উত্তম। জ্বলন্ত বস্তুতে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি বা বালি ছিটিয়েও আগুন নেভানো যায়।

ফায়ার এক্সটিংগুইসারের গায়ে লিখা থাকে তাতে কী ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে। সিলিন্ডারের সাথে সংযুক্ত প্রেসার গেজের রিডিং দেখে বুঝা যায় তা কার্যকর হয়েছে কিনা। সিলিন্ডারের গায়ের রং দেখেও বুঝা যায় তা কী ধরনের এক্সটিংগুইসার। যেমন- লাল রং হচ্ছে ওয়াটার টাইপ, ক্রীম কালার হচ্ছে ফোম টাইপ, কালো রং হচ্ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড টাইপ এবং নীল রঙের এক্সটিংগুইসার হচ্ছে পাউডার টাইপ।
 firefighting

ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহারে কিছু সতর্কতা :
 
(১) সর্বদাই বাতাসের অনুকূলে থেকে প্রয়োগ করতে হয়। নইলে আগুনের উৎপত্তিস্থলে কেমিক্যাল পৌঁছাবে না।
 
(২) আগুনের উৎপত্তিস্থলের সর্বোচ্চ দুই মিটার দূর থেকে এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ করতে হয়। নইলে প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল আগুন পর্যন্ত নাও পৌঁছাতে পারে।
 
(৩) বাঁ হাতে হোস পাইপ ধরার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, কোন অবস্থাতেই হাতের আঙুল যেন হোস পাইপের মুখে না থাকে। তাহলে প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল নির্গমন ও লক্ষ্যস্থলে পৌঁছা বাধাপ্রাপ্ত হবে। তাছাড়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড জাতীয় গ্যাস এক্সটিংগুইসারের সিলিন্ডারে অতি হিমশীতল অবস্থায় কমপ্রেসড্ আকারে থাকে বলে হোস পাইপ দিয়ে প্রচণ্ড শব্দ করে চাপমুক্ত হয়ে বের হবার সময় আঙুলে লাগলে ভয়ঙ্কর শীতলতায় আঙুল সাময়িক বা স্থায়ীভাবে অসার হয়ে যেতে পারে।
 
(৪) ফায়ার এক্সটিংগুইসার একবার ব্যবহার হয়ে গেলে একইসাথে পুরোটাই ব্যবহার করে ফেলতে হয়। দ্বিতীয়বার তা ব্যবহারযোগ্য থাকে না।
 
(৫) সহজে বহনযোগ্য এক্সটিংগুইসার আগুনের উৎপত্তিস্থলে বয়ে নিয়ে ডান হাতে বাটন বা লিভার চেপে প্রয়োগের আগমুহূর্তে বাঁ হাত দিয়ে টেনে সেফটি-পিন খুলতে হয়। লক্ষ্যস্থলে যাবার আগেই সেফটি-পিন খুলে ফেললে অসতর্কতায় ডানহাতের চাপে কেমিক্যাল বেরিয়ে যেতে পারে। ফলে প্রয়োজন অবস্থায় তা আর ব্যবহারের জন্য অবশিষ্ট নাও থাকতে পারে।
 
(৬) কোন কারণে এক্সটিংগুইসার ব্যবহার করেও আগুনের নিয়ন্ত্রণ আনা না গেলে বা আগুন বেড়ে গেলে ধরে নিতে হবে আগুনের প্রাথমিক অবস্থা পেরিয়ে গেছে। তখন অবশ্যই নিরাপদ অবস্থানে চলে যেতে হবে এবং দ্রুত ফায়ারম্যানকে সংবাদ দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
 
(৭) কার্বন-ডাই-অক্সাইড টাইপ এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ করা হলে আগুন নিভুক বা না-নিভুক, ঘটনাস্থলে বেশি সময় অপেক্ষা করা যাবে না। নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড অচিরেই অবস্থানকারী ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে।
 
(৮) মুক্ত বা খোলা স্থানে বা ধাবমান বাতাসযুক্ত স্থানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড টাইপ এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ খুব একটা কার্যকর হয় না। এক্ষেত্রে বালি বা পানি (প্রয়োজন অনুযায়ী) ব্যবহারই উত্তম।

# আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডে আমাদের করণীয়
আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের খবর পেলে প্রথমেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের যা ঘটে, স্বাভাবিক যুক্তিবোধ ও মাথাটা এলেবেলে হয়ে যাওয়া। ফলে একটা হুড়োহুড়ি বেঁধে গিয়ে অযথা সৃষ্ট জটিলতায় নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই বিঘ্নিত করে ফেলি। এটা ঘটে একমাত্র সচেতনতার অভাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যেকোন অগ্নিকাণ্ডই শুরুতেই বিধ্বংসী রূপ নেয় না। এজন্যে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন পড়ে। এই আপতিক সময়ের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হলেও যে কোন ভবন থেকে নিরাপদে সমস্ত লোকজনের বের হয়ে যাওয়া সম্ভব। তাই নিজে মাথা ঠাণ্ডা রাখুন এবং অন্যকে অভয় দিন ও সাহায্যে এগিয়ে আসুন। এরকম দুর্ঘটনা আপনার বাসা-বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে বা আপনার অবস্থানরত অন্য কোন অফিস-আদালত বা মার্কেটে বহুতল ভবনে ঘটতে পারে। তখন কী করবো আমরা ?

@ বাসায় বা কর্মক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া মাত্র মাথা ঠাণ্ডা রেখে প্রথমেই বিদ্যুতের সুইচ অফ করার চেষ্টা করুন। এরপর নির্দিষ্ট স্থানে রক্ষিত বহনযোগ্য ফায়ার এক্সটিংগুইসারটি খুলে নিয়ে আগুনের উৎসস্থল খুঁজে বের করুন।
 
@ গ্যাসের চূলায় আগুন ধরলে ভেজা কাঁথা, কম্বল বা বস্তা ইত্যাদি দিয়ে ঢেকে দিলে আগুন নিভে যাবে।
 
@ অন্য কোন আগুনের ক্ষেত্রে সাহসী দুয়েকজন ছাড়া বাকি সবাইকে নিরাপদে এক্সিট রোড দিয়ে বের হয়ে যাবার পরামর্শ দিয়ে আগুনের অবস্থা যাচাই করে যথানিয়মে এক্সটিংগুইসার প্রয়োগ করুন। যদি সেখানে দায়িত্বরত ফায়ারম্যান উপস্থিত থাকে তবে তাঁকে সহায়তা করুন এবং তাঁর পরামর্শ মান্য করুন।
 
@ এক্সটিংগুইসার প্রয়োগেও আগুন নিয়ন্ত্রণে না এলে অফিসে/ফ্লোরে ফায়ার হাইড্রেন্ট সিস্টেম সক্রিয় থাকলে তা ব্যবহার করুন। কমপক্ষে তিনজন মিলে তা ব্যবহার করুন। একজন হাইড্রেন্টের হোস পাইপের নজেল ধরে আগুনের উৎসের দিকে এগিয়ে যান, দ্বিতীয় জন নব খুলে হাইড্রেন্ট দ্রুত চালু করার নির্দেশের অপেক্ষায় থাকুন এবং তৃতীয়জন আগুনের দিকে প্রথমজনের হোস পাইপ তাক করা হলে দ্বিতীয়জনকে নব খোলার পরামর্শ দিন এবং একইসাথে অফিসের দায়িত্বরত ব্যক্তি/ফায়ারম্যান বা নিকটস্থ ফায়ার-স্টেশনে সংবাদ দেয়ার চেষ্টা করুন।
 
@ ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবহারে প্রবল বেগে পানির স্প্রে বড়সড় অগ্নিকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম। তবে পানি ব্যবহারের আগে সতর্ক হতে হবে তা তরল-পদার্থের বা ধাতব পদার্থের বা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের আগুন কিনা। তাহলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তরল বা ধাতব পদার্থের আগুন পানির স্পর্শে আরো ছড়িয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। আর বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে সৃষ্ট আগুনে পানি স্প্রে করা হলে বিদ্যুৎ লাইন অফ না থাকলে ভেজা স্থান বিদ্যুতায়িত হয়ে বিদ্যুতস্পৃষ্টের দুর্ঘটনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
 
@ কোনভাবেই অতিরিক্ত ঝুঁকি নেয়া যাবে না। আগুন নিয়ন্ত্রণে না এলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে আসুন।
 
@ ভুলেও লিফট ব্যবহার করবেন না। ভেতরে আটকে পড়ে যেতে পারেন। নির্গমন সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
 
@ এক্সিট পথে বা সিঁড়িতে সবাইকে ডিঙিয়ে আগে যাবার চেষ্টা করবেন না। এতে স্বাভাবিক নির্গমনে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে জ্যাম লেগে যেতে পারে। আগের জনকে আগে বেরিয়ে যেতে সহায়তা করুন।
 
@ সকল ক্ষেত্রে ধৈর্য্য প্রদর্শন করুন। হুড়োহুড়ি করলে পদপিষ্ঠ হবার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
 
@ কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে বের হতে সহায়তা করুন এবং চিকিৎসাসেবা দেয়ার চেষ্টা করুন।
 
@ কারো গায়ের পোশাকে আগুন লেগে গেলে দৌড় দেবার চেষ্টা করবেন না, এতে আরো বেশি অক্সিজেনের সংস্পর্শে আগুন বেড়ে যাবে। সাথে সাথে বসু পড়ুন এবং মাটিতে গড়াগড়ি দিন। অক্সিজেন না পেয়ে আগুন নিভে যাবে।
 
@ কখনো কখনো কেউ অগ্নিকাণ্ড থেকে নিরাপদে বেরিয়ে এসে আবারো কোন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস উদ্ধারের জন্য আগুনের উৎসের দিকে ছুটে যান। কখনো এরকম করতে যাবেন না। এতে করে নিজের ঝুঁকি বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্যের নিরাপদে বেরিয়ে আসা বিঘ্নিত হয়। প্রাণের চাইতে অধিক মূল্যবান আর কিছু হতে পারে না।
 
@ নিজের নিরাপত্তার পাশাপাশি অন্যের জান-মালের নিরাপত্তাকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। অতি-উৎসাহী হয়ে অগ্নি-নির্বাপক ও উদ্ধারকারী দলের কাজে অযথা বাধার সৃষ্টি করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। আপনার-আমার একটু অসতর্কতা বা অসচেতনতার কারণে আরেকজনের নিরাপত্তা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। পারলে সহায়তা করুন, না পারলে বাধার সৃষ্টি করবেন না।
 fire-sculpture-001

# সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ বা প্রতিকারে প্রাক-প্রস্তুতি
@ বাসা-বাড়িতে নিজস্ব উদ্যোগে একটি করে ছোটখাটো ফায়ার এক্সটিংগুইসার সংরক্ষণ করুন।
@ বিদ্যুতের সংযোগ লাইন ও অয়ারিংগুলো মাঝে মাঝে দক্ষ/অনুমোদিত বিদ্যুৎ কৌশলীর মাধ্যমে নিয়মিত চেক করিয়ে নিন। প্রয়োজনে টেম্পার নষ্ট হয়ে যাওয়া পুরনো বৈদ্যুতিক তার/যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করিয়ে নিন।
@ গ্যাস পাইপে কোন লিক হচ্ছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। অপ্রয়োজনীয়ভাবে গ্যাসের চূলা জ্বালিয়ে রাখা থেকে বিরত থাকুন। গ্যাসের চূলা জ্বালানোর আগে সতর্কতা হিসেবে কিছুক্ষণ জানালা-দরজা উন্মুক্ত করে সম্ভাব্য জমে থাকা গ্যাস ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার সুযোগ করে দিন। কাজ শেষে চূলা নিভিয়ে সন্দেহাতীতভাবে সুইচ অফ রাখুন যাতে কোন গ্যাস লিক না করে।
@ জ্বলন্ত মেচের কাঠি বা সিগারেটের আগুন যেখানে সেখানে ছুঁড়ে ফেলা থেকে বিরত থাকুন। পায়ে মাড়িয়ে আগুন নিভেছে নিশ্চিত হয়ে স্থান ত্যাগ করুন।
@ কর্মক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতিগুলোর অবস্থান দেখে রাখুন এবং মাঝে মাঝে চেক করুন।
@ বহুতল ভবনের অধিবাসী হলে মাঝেমধ্যে সিঁড়ি ব্যবহার করে নামার চেষ্টা করুন। সিঁড়ির কোথাও প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা সরিয়ে ফেলানোর ব্যবস্থা নিন। সিঁড়িপথ সবসময় উন্মুক্ত থাকা বাঞ্ছনীয়।
@ বাড়িতে, ভবনে বা আশেপাশে অতিসংবেদশীল দাহ্যপদার্থ সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকুন, অন্যকেও তা করা থেকে বিরত রাখুন। স্টোররুমকে আজেবাজে জিনিস দিয়ে অযথা ভারাক্রান্ত করবেন না।
@ নতুন ও অপরিচিত কোন অফিস, মার্কেট বা বহুতল ভবনে গেলে ভবনের জরুরি এক্সিট পথ চিনে রাখুন। প্রয়োজন মুহূর্তে যাতে ব্যবহার করা যায়।
@ আগুনের ধর্ম উপরের দিকে উঠা। বহুতল ভবনের নিচের দিকের কোন ফ্লোরে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে সিঁড়ি পথ দিয়েই আগুন উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরকম ক্ষেত্রে নিচে নামতে সতর্ক থাকুন। নিচে নামা না গেলে প্রয়োজনে ভবনের খোলা ছাদে উঠে যাওয়া যেতে পারে। এতে ঝুঁকি কম থাকবে এবং উদ্ধার করা সহজ হবে।
@ জরুরি টেলিফোন নম্বর মুখস্ত রাখুন। ঢাকার ফায়ার কন্ট্রোল রুমের নম্বর হচ্ছে ১৯৯।
 footer-1


# কেন্দ্রিয় অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার ব্যবস্থা
যেকোন বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণের প্রাথমিক পদপেগুলো ব্যর্থ হয়ে যায় বলে খবর পাওয়া মাত্র নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষাকল্পে রাষ্ট্রীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স টিম তাদের নিজস্ব দায়িত্ব হিসেবেই সুদক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জরুরি উদ্যোগ নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে তিনটি টিম সমন্বিতভাবে কাজ করে থাকে।
 
(ক) ফায়ার ফাইটিং টিম (Fire Fighting team) : মূলত অগ্নি নির্বাপণের বিভিন্ন পদ্ধতি ও ব্যবস্থার মাধ্যমে অগ্নি নির্বাপণে কাজ করে ফায়ার ফাইটিং টিম।
 
(খ) রেসকিউ টিম (Rescue team) : আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারকাজে ব্যস্ত থাকে রেসকিউ টিম।
 
(গ) ফার্স্ট এইড টিম (First aid team) : অগ্নিকাণ্ডে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া ও আহতদের শুশ্রূষার দায়িত্বে থাকে ফার্স্ট এইড টিম। কারণ সময়মতো প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে অনেক সময় আহত ব্যক্তির জীবন রা তথা পঙ্গুত্বের হাত থেকে রক্ষা করা যায়।

অনেক ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা, দূরত্ব ও অন্যত্র দায়িত্বে থাকার কারণে কেন্দ্রিয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স দলের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পৌঁছতে সময় ক্ষেপন ঘটে যাওয়া অসম্ভব নয়। ফলে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যায় এবং আশেপাশে বিস্তারলাভ করে আরো ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। এজন্যে বহুতল ভবনগুলোতে নিজস্ব উদ্যোগেও এ ধরনের ফায়ার ফাইটিং, রেসকিউ ও ফার্স্ট এইড টিম থাকা আবশ্যক বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সাথে আরেকটি নিজস্ব ‘সিকিউরিটি টিম’ থাকাও বাঞ্ছনীয়। যারা এই জরুরি সময়ে অনাহুত উৎপাত ও লুটতরাজের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে নজরদারি করবে।

এছাড়া অগ্নি নির্বাপণের জন্য বহুতল ভবনে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত:

(১) ফায়ার এস্কেপ-এর জন্য ভবনের উভয় পার্শ্বে প্রশস্ত সিঁড়ি থাকা প্রয়োজন, যেন অগ্নি দুর্ঘটনায় দ্রুত নিষ্ক্রান্ত হওয়া যায়।
(২) পর্যাপ্ত সংখ্যক ফায়ার এক্সটিংগুইসার থাকা প্রয়োজন, যেন প্রাথমিক অবস্থাতেই দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলা যায়।
(৩) ফায়ার হাইড্রেন্ট বা স্প্রিংকলার স্প্রে সিস্টেম থাকা প্রয়োজন, যেন বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডও সহজে নির্বাপণ করা যায়।
(৪) ফায়ার পাম্প ও জকি পাম্প থাকা প্রয়োজন যেন ফায়ার হাইড্রেন্ট-এ পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।
(৫) ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের জন্য প্রশস্ত রাস্তা থাকা প্রয়োজন, যেন ফায়ার সার্ভিসের লোকজন অগ্নি নির্বাপণে সহায়তা করতে পারেন।
(৬) ভবনের ফোরগুলোতে নির্গমন পথ প্রদর্শক চিহ্ন থাকা প্রয়োজন, যেন অন্ধকারেও নির্গমন পথ চেনা যায়।
(৭) ভবনের নক্সা প্রবেশ পথে রাখা প্রয়োজন, যেন নবাগতরা আগমন-নির্গমন পথের অবস্থান বুঝতে পারেন।
(৮) ফায়ার লিফট থাকা প্রয়োজন, যেন অগ্নি দুর্ঘটনার সময় উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা যায়।
(৯) ফায়ার রিফিউজ এরিয়া থাকা প্রয়োজন, যেন অগ্নি দুর্ঘটনার সময় কাছাকাছি অবস্থানে নিরাপদ আশ্রয় নেয়া যায়।
(১০) অটো ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম থাকা প্রয়োজন, যেন দুর্ঘটনার বিষয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ণীত হয়।
(১১) অটো ফায়ার এলার্মিং সিস্টেম থাকা প্রয়োজন, অগ্নি দুর্ঘটনার বিষয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ণীত হওয়ার পর যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিপদ সংকেত বাজতে থাকে।
পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে নিজেকে নিরাপদ ভাবা ভয়ানক নির্বুদ্ধিতা। যাকে অতি ক্ষুদ্র ভেবে অবহেলা করতে নেই তা হলো আগুন। এবং যার ভয়ঙ্কর বিধ্বংসী রূপ দেখেও মনোবল হারাতে নেই তাও হচ্ছে আগুন। উভয়ক্ষেত্রেই সমূহ সর্বনাশ ডেকে আনে। তাই কোথাও আগুন লাগলে মনোবল না হারিয়ে সাহস নিয়ে নেভানোর চেষ্টা করতে হবে, এটা যেমন শুরুর কথা, শেষ কথাও এটাই। আগুন থেকে সবাই নিরাপদ থাকুন, অন্যকেও নিরাপদ রাখুন।

‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।’ 
-- প্রাচীন গ্রীক কবি ইউরিপিডিস (৪৮০-৪০৬ খ্রীঃ পূঃ) 

Post a Comment

0 Comments