Leadership (লিডারশীপ) ইংরেজী শব্দ। এর বাংলা অর্থ হলো নেতৃত্ব। নেতৃত্ব একটি ব্যবস্থাপনা কৌশল, পরিচালনার একটি উপায়। ইংরেজী ‘‘Lead’’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল ‘‘To guide, conduct, Direct and Precede’’ অর্থাৎ পথ প্রদর্শন করা, চালনা করা, নির্দেশ দেয়া ও অনুগামী হওয়া। নেতা হলো যিনি একদল মানুষকে কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিচালনা করেন। নেতার কাজই হলো নেতৃত্ব। তাই Leadership বা নেতৃত্ব বলতে পথপ্রদর্শন বা পরিচালনার কলাকৌশলকে বুঝায়। একজন ব্যবস্থাপক তার দলের কর্মীদের একজন নেতা। তিনি দলের কর্ণধার। নেতা হিসেবে ব্যবস্থাপকের নেতৃত্ব দানের গুণ থাকতে হবে। কিন্তু সব নেতাকেই ব্যবস্থাপক হতে হবে তার কোন কারণ নেই। ব্যবস্থাপনা অন্যদের দ্বারা কাজ করে নেয়ার সাথে সম্পৃক্ত। অতএব দক্ষ ব্যবস্থাপকের অবশ্যই নেতৃত্বসুলভ গুণ থাকতে হবে। ব্যবস্থাপক যাদের দ্বারা কাজ করাবেন তিনি হবেন তাদের নেতা। বস্তুত সুযোগ্য ব্যবস্থাপনা নেতৃত্ব সর্বাধিক দক্ষতা ও মিতব্যয়িতার সাথে কার্য হাসিল ও উদ্দেশ্যার্জন সম্ভব করে। একজন নেতা বা ব্যবস্থাপক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য যে কার্যপরিচালনা করে তার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই নেতৃত্ব। নেতা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। তিনি তার অধস্তনদের দ্বারা কাজ করিয়ে নেন।
নেতৃত্ব হল এমন একটি শক্তিশালী উপাদান বা কৌশল যা অধস্তন বা দলের বিভিন্ন লোকের প্রকৃতি ও স্বরূপকে সামনে রেখে তাদেরকে এমনভাবে পরিচালিত করা যাতে সবাই আস্থার সাথে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলীয় বা সাংগঠনিক উদ্দেশ্য অর্জনে তৎপর হয়। বস্তুত কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্তে কোন ব্যক্তি বা দলের আচরণ, মনোভাব, প্রচেষ্টা ও সামগ্রিক কর্মকান্ডের ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়াকেই নেতৃত্ব বলে। নেতৃত্ব হচ্ছে একটি প্রভাবিতকরণ কার্যক্রম।
নেতৃত্ব এটি বহুল আলোচিত বিষয়। এর কোন সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই। নেতৃত্বের বিষয় নিয়ে উন্নত বিশ্বের বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতগণ ব্যাপক আলোচনা ও গবেষণা করেছেন। এ পর্যন্ত ২৫০০ এর বেশী সমীক্ষণ চালানো হয়েছে। কিন্তু এর কোন সর্বজনীন সংজ্ঞা নিরূপিত হয়নি। নেতৃত্ব সম্পর্কিত ধারণা বিভিন্ন সময়ে এবং বিরাজমান বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন। এটা এমন একটি বিষয় যা সংজ্ঞায়িত করা কঠিন, এটি প্রায়ই বিষয়কেন্দ্রিক বা আত্মপ্রকাশক এবং সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য এবং এটার সীমিত সাধারণ ব্যবহার রয়েছে।
নেতারা ভাল সময়ের পরিবর্তে বরং শুধুমাত্র সংকটকালে সামনে আসবেন। আমরা কি প্রকৃতপক্ষে সংকট ব্যতিত নেতাদের প্রয়োজন বোধ করি? ভাল সময়ে কি নেতাদের কোন ভূমিকা নেই? সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তখন কি কার্যত নেতার প্রয়োজন আছে? যদি তাই হয়, তাহলে যখন সবকিছু (দৃশ্যত) ঠিকঠাক থাকে সেই সময়ের নেতৃত্ব থেকে সংকটকালের নেতৃত্বের পার্থক্য কতটা? এখানে আমি, এই বিষয়গুলো এবং যারা চিন্তা-ভাবনা করেন তাদের মনে যেসব প্রশ্ন বাসা বেঁধে থাকতে পারে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
নেতৃত্বের মধ্যে রাজনৈতিক, সামরিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক নেতৃত্ব রয়েছে। এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সমভাবে সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমি এখানে অর্থনৈতিক অঙ্গনে সংকটজনক সন্ধিক্ষণে বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে নেতৃত্বের ভূমিকার ওপর আলোকপাত করবো। যে কোন বিষয়ে আলোচনা বৈশিষ্ট্য সূচকভাবে বিষয়টির সংজ্ঞা দিয়ে শুরু হলেও আমি এখানে তা করবো না। আমি বরং এর পরিবর্তে নেতৃত্বের কতিপয় মাত্রা এবং সেগুলোর প্রযোজ্যতা ও মূল্যের ওপর আলোকপাত করবো।
বলা হয়ে থাকে যে, সংকটের সময় নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। ব্যাপকভাবে পোষণকৃত এই দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি আমি কিছু মৌলিক বিষয় উত্থাপন করবো। ইতোমধ্যে আসুন আমরা সংক্ষিপ্তভাবে নেতৃত্বের ইতিহাস দেখি। প্রাচীনকালে নেতৃত্ব ও সামরিক নেতৃত্ব সমার্থক ছিল। এর কারণ হলো সামরিক শক্তি ছাড়া রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক ক্ষমতা স্থায়ী বা টেকসই হতো না। ক্ষমতা প্রকৃতপক্ষেই কাজ করে, মাও সেতুংয়ের ভাষায় ‘‘ক্ষমতা বন্দুকের নল থেকে প্রবাহিত হয়’’। এ প্রসঙ্গে সহসা অন্য যেসব কিংবদন্তীর কথা মনে পড়ে তারা হলেন, আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট, জুলিয়াস সিজার, রাণী এলিজাবেথ প্রথম এবং অবশ্যই অতি সুপরিচিত রবার্ট ক্লাইভ। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও সামরিক ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে ভিন্নমুখী হয়ে যাওয়ায়, সামরিক নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে, তবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব জাতির দৈনন্দিন জীবন ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা ব্যাপকভাবে ধারণ করে কেন্দ্রীয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। জাতীয় শক্তি হিসেবে রাজনীতির ক্রমবর্ধমান প্রাধান্যের সমান্তরালে বাণিজ্য সামরিক বাহিনী ও রাজনীতি থেকে স্বাধীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনীতির রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য নেতার প্রয়োজন হয়, তেমনি বাণিজ্যের বাণিজ্যিক লক্ষ্য অর্জনের জন্যও নেতার প্রয়োজন হয়। প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্বের পৃথক স্রোতধারা গড়ে উঠেছে, প্রত্যেক ক্ষেত্রে গুরুত্ব প্রদান ও আলোকপাত পৃথক যদিও যন্ত্র বা কাজের হাতিয়ার প্রায় একই রকম। এগুলো বিকশিত হয়ে চলেছে এবং একবিংশ শতাব্দীতে রাজনৈতিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক নেতৃত্ব এই সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ তবে পৃথক হিসেবে দেখা হচ্ছে প্রত্যেকটিরই উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে বিশেষায়িত ভূমিকা রয়েছে, এগুলো উপায় উপকরণে একই ধরনের, তবে কৌশল ও প্রয়োগে পৃথক।
সামরিক নেতৃত্ব আদেশ ও আনুগত্যের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে পারে- রাজনৈতিক নেতৃত্ব এগুলোর ওপর সবচেয়ে কম নির্ভর করে, এরা চাতুর্য ও উপলব্ধির ওপর বেশি নির্ভর করে। এ দু'য়ের মধ্যে কোনো এক অবস্থানে রয়েছে বাণিজ্যিক নেতৃত্ব। নেতৃত্ব প্রায়ই অস্পর্শনীয়, অজানা ও অদৃষ্ট বিষয় নিয়ে কারবার করে। দলকে যথাযথভাবে কাজ করানোর জন্য নেতার মধ্যে বিশ্বাস, আস্থা ও আত্মবিশ্বাস থাকা আবশ্যক। যুদ্ধ সম্পর্কিত সত্য প্রায়ই রহস্য ও ভুল তথ্যে আবৃত থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না সৈনিকের মৃত্যুর বহু বছর পর প্রশ্নসাপেক্ষে সামরিক নেতৃত্বের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় এবং বহু অল্প লোক ঐ মৃত্যুর নিন্দা করতে আগ্রহী থাকে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতায় প্রায়ই পুরস্কার জোটে পদচ্যুতি অথবা কখনো কখনো রসালো কূটনৈতিক অপসারণ। বাণিজ্যিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা কিন্তু ক্ষমার অযোগ্য এবং এক্ষেত্রে খুবই কঠোরভাবে ও দ্রুতগতিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সম্মানজনক পদ থেকে অপসারণ করা হয় অবিলম্বে। এখানে অবশ্যই বাণিজ্য ও শিল্পের নেতৃত্বের ওপর মনোনিবেশ করবো, অর্থনৈতিক চক্রের সন্ধিক্ষণে যেক্ষেত্রে নেতৃত্ব ও হস্তক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেক্ষেত্রে নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্যের ওপর খুব বেশি মনোনিবেশ করবো না।
তবে প্রথমে আমরা নেতৃত্বের কতিপয় অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করি। কর্তৃত্বের তিনটি ধরন আছে: অবস্থান বা পদের কর্তৃত্ব, ব্যক্তিত্বের কর্তৃত্ব এবং জ্ঞানের কর্তৃত্ব। কর্তৃত্ব হচ্ছে ক্ষমতা-নেতৃত্ব নয়। অন্যদিকে জ্ঞান হচ্ছে নেতৃত্বের প্রবেশপথ। অতীতে সক্রেটিসের আমলে ভাবা হতো যে, নেতৃত্ব পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং বহুলাংশে যথোপযুক্ত জ্ঞানসম্পন্ন নেতার ওপর নির্ভরশীল। স্পষ্টতই লোকেরা শুধুমাত্র ঐসব লোকদেরকে স্বেচ্ছায় মান্য করবে যাদেরকে তারা বিশেষ পরিস্থিতির তুলনায় বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন অথবা বেশি জ্ঞানসম্পন্ন গণ্য করবে। সুতরাং পেশাদারী বা কারিগরি যোগ্যতা হবে নেতৃত্বের দায়দায়িত্বের পদ ধরে রাখার একটি পূর্বশর্ত। একবার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে তা নেতার কাজের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে জোরদার করতে হবে। সুষ্ঠু জ্ঞান বা কারিগরি দক্ষতা প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। নেতারা অবশ্যই দৃষ্টান্তের মাধ্যমে নেতৃত্ব দেবেন। তারা যা কিছুই করুন না কেন মনোযোগ এড়াবে না। তারা লোকদেরকে উৎসাহিত করবেন। তারা অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে অন্যদেরকে নতুন সাহস যুগিয়ে চেতনা নবায়ন করবেন। নেতাদেরকে বলিষ্ঠ প্রশাসক হতে হবে। কেননা দৃঢ়তার অভাব মর্যাদা হারানোর দিকে ঠেলে দেয়।
‘‘সংকটকালে নেতৃত্বের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়’’ এমন বিতর্কে আমার আপত্তির কথা বলি। ইতোমধ্যেই যথেষ্ট ভুলভ্রান্তি হয়ে যাওয়া এবং পরিস্থিতি বেপরোয়া হয়ে যাওয়ার পর সংকট আসে। সুতরাং প্রশ্ন হলো যখন সবকিছুর বিপর্যয় ঘটতে থাকে তখন নেতা কোথায় যাবেন? পরিস্থিতি সংকটে রূপ নেয়ার আগে নেতৃত্বের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় এবং সেকারণে এর বিশাল মূল্য রয়েছে। সংকট সৃষ্টি হওয়ার আগেই হস্তক্ষেপ বা বাধা আসতে হবে। সবকিছুতে বিপর্যয় ঘটতে শুরু করার আগে অবশ্যই এটা ঘটতে হবে। ভাল নেতারা সংকটে পতিত হওয়ার নেতিবাচক ধারা প্রতিরোধে হস্তক্ষেপ করবেন। যখন সংশোধনমূলক ব্যবস্থার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় তখনই এটা করতে হবে। তারা অবশ্যই খুব দ্রুতগতিতে বিপর্যয়ে পতিত হওয়া প্রতিরোধে এবং ঊর্ধ্বগতির জন্য প্রস্তুতি নিতে একটি গতিপথ রচনা করবেন। নেতা সময়মতো হস্তক্ষেপ করলে সংকটের গভীরতা কমিয়ে আনা এবং সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে অধিকতর দ্রুতগতিতে পুনরুদ্ধারের ধারায় ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।
নেতৃত্বের মূল্য সমৃদ্ধি ও প্রতিকূলতা উভয় সময়েই অতি গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু যখন ঠিকঠাক চলে, তখন অপরিহার্য অধঃপতনের অপচ্ছায়া আবির্ভূত হয় যা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে এবং সাফল্য ও ব্যর্থতার চক্রে প্রকাশিত হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ হলে সংগঠন অধঃপতনের ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হয়। অর্থনৈতিক চক্রে প্রকৃতপক্ষে কখনই কোন ভাল অবস্থানবিন্দু থাকে না, কেননা প্রত্যেক অবস্থানবিন্দুর হয় পতন ঘটছে অথবা উপরে শীর্ষের দিকে উঠে যাচ্ছে, সেখান থেকে আবার এটার পতন ঘটবে। পূর্বাভাস, পরিকল্পনা ও যোগাযোগের সুবাদে ঊর্ধ্বচক্র দীর্ঘায়িত এবং নিম্নচক্র খাটো হতে পারে।
সমৃদ্ধির সময়ে আত্মতৃপ্তি হচ্ছে একটি সাধারণ মানব ব্যর্থতা। তবে নেতাদের অবশ্যই সাধারণের উপরে উঠতে হবে-প্রকৃতপক্ষে সেটাই তাদের নেতৃত্বের উৎকর্ষতার লক্ষণ। ধারা-প্রবণতা যখন ইতিবাচক থাকে তখন তারা অবশ্যই হস্তক্ষেপ করবেন যাতে করে সংগঠন ভিন্ন অবস্থার তুলনায় সুযোগ সর্বোচ্চ পরিমাণে বাড়াতে পারে, অধিকতর লম্বা শিখরে এবং উচ্চতর শৃঙ্গে পৌঁছতে পারে। এছাড়া অধঃপতনের ক্ষেত্রে একজন ভাল নেতা হস্তক্ষেপ করে আবার পুনরুদ্ধার চক্রের আগে অধঃপতনের ঢাল কমাবেন এবং খাদের গভীরতা ন্যূনতম করবেন। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি নেতার হাতের মুঠোয় রয়েছে এরকম সুস্পষ্ট ধারণা বা বিশ্বাস দলকে এমন আস্থা যোগাবে যে, সংগঠন সর্বনিম্ন যন্ত্রণায় ঝড়ঝঞ্ঝা থেকে বেরিয়ে আসবে। নেতার উৎসাহ উদ্দীপনা দলের শক্তিকে এমন ভবিষ্যৎ অর্জনের দিকে চালনা করবে যা তারা প্রকৃতপক্ষে নিজেদের জন্য সৃষ্টি করে।
পূর্ববর্তী আলোচনা থেকে এটা স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, ভাল নেতৃত্ব প্রতিকূলতার ক্ষতি সর্বনিম্নে কমিয়ে আনা এবং সমৃদ্ধির চূড়া সর্বোচ্চ পরিমাণে বৃদ্ধি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ভাল সময়, সংকটের সময়, অবনতির সময় এবং উন্নতির সময়, সব সময়ই নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং নেতৃত্ব সব সময়ই প্রয়োজন, সব সময় তাৎপর্যপূর্ণ এবং সব সময় গুরুত্বপূর্ণ, সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক চক্রের অবস্থা যাই হোক না কেন। নেতৃত্ব শুধুমাত্র সংকটকালে অথবা এমনকি কতিপয় অন্য বিশেষ পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ, এরকম তর্ক জুড়লে সেক্ষেত্রে নেতৃত্বের অপরিহার্যতাকে কিছুটা খর্ব করা হয়। বলা হয়ে থাকে যে, নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ অন্য সময়ের তুলনায় অর্থনৈতিক চক্রের কতিপয় সংকটপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এই সমালোচনামূলক বিষয়গুলো সাফল্য চক্রের প্রায় মাঝামাঝি উপরে এবং ব্যর্থতা চক্রের মাঝামাঝি নিচে। এরকম হস্তক্ষেপকে ‘‘বিশেষ নেতৃত্ব হমস্তক্ষেপ’’ (এসএলআই) এবং যেসব অবস্থায় এরকম হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয় সেগুলোকে ‘‘বিশেষ নেতৃত্ব হস্তক্ষেপ পয়েন্টস’’ বা এসএলআইপিএস বলে আখ্যায়িত করেছি। এসএলআই চূড়াকে সর্বোচ্চ পরিমাণে বৃদ্ধি করে এবং খাদকে সর্বনিম্ন পরিমাণে কমিয়ে আনে। নেতৃত্ব অবশ্যই অর্থনৈতিক চক্রের প্রত্যেক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ তবে এসএলআইপি'র পর্যায়ের তুলনায় এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাত্ত্বিকভাবে, কমপক্ষে বিশেষ নেতৃত্ব হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রতি পাঁচটি অধঃপতনের মধ্যে কমপক্ষে একটির মারাত্মক পরিণতি সম্পূর্ণভাবে এড়ানো যেতে পারে।
নেতাদের অবশ্যই জানতে হবে কখন হস্তক্ষেপ করতে হয়। সুতরাং তারা অবশ্যই গতিধারার প্রতি সংবেদনশীল হবেন। তারা অবশ্যই আভাস দেবেন এবং প্রচলিত প্রজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করবেন। তারা অবশ্যই সময়ে সময়ে যে বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন সেগুলোর সমাধান ভেবে বের করবেন। তারা অবশ্যই সৃষ্টিশীল হবেন কেননা প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জই অনন্য। তা সত্ত্বেও, বিশ্বে দু'টি বস্তু বা ঘটনা একইরকম নয়-সুতরাং কেন কোনো দু'টি এতটা একই রকম হবে যে, সেগুলোতে একই সমাধানে সাড়া পাওয়া যাবে? প্রত্যেক চ্যালেঞ্জ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা একজন নেতার বিচার-বিবেচনাকে উন্নত করে তবে সেগুলো তাকে তৈরি সমাধানের যন্ত্রপাতির বাক্স যোগায় না।
একজন নেতা অবশ্যই এমনকি পূর্ণ তথ্যের অনুপস্থিতিতে নিত্তিকারক হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। নেতারা যেসব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন সেগুলোর বেশিরভাগই ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত, যেগুলো সম্পর্কে সকল প্রকৃত অবস্থা ও তথ্য পাওয়া সম্ভব। এর জন্যে বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়। যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে পুরো প্রকৃত অবস্থা ও তথ্যের প্রয়োজন বোধ করেন তারা ভাল নেতা হতে পারেন না।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আভাস দেয়ার উত্তম পন্থা হচ্ছে ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করা অথবা অন্যান্য কথার উদ্ধৃতি দেয়া যেতে পারে। নেতার চেয়ে আর কে অধিকতর যিনি ভালভাবে ভবিষ্যৎ দৃষ্টিগোচর করানো এবং ভবিষ্যৎ সৃষ্টির জন্য দলকে উৎসাহিত করতে পারে?
নেতাদের অবশ্যই বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাহস থাকতে হবে। সাহস বলতে ভয়হীন হওয়া নয়; এটা হচ্ছে ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করা এবং তা থেকে শক্তি ও দৃঢ়সংকল্প বের করে আনার ইচ্ছা বা সামর্থ। প্রতিকূলতাকে সুযোগ-সুবিধায় রূপান্তরিত করা। রহম ইমানুয়েলের কথায় ‘‘সংকটকে কখনই অপচয় করো না’’। মৌলিক কর্মবিধির রেখায়, নেতাদের কখনই বল থেকে চোখ সরিয়ে নেয়া উচিত নয়। তারা অবশ্যই সর্বদা দৃশ্যমান হবেন, এমনকি স্পর্শত বোধগম্য হবেন। সব সময়ই নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে এসএলআইপি-এর সময়।
নেতৃত্ব দেয়ার সামর্থ্য ব্যবস্থাপনাগত সাফল্যের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক নেতাদের সাথে প্রায়ই ব্যবসায় ব্যবস্থাপক এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক নেতাদের তুলনা করা হয়। বস্তুত উভয় ধরনের ব্যক্তিদের স্পষ্ট লক্ষ্য, ভূমিকা ও দায়িত্ব আছে এবং তাদের একই ধরনের গুণাবলি, যেমন দৃষ্টিভঙ্গি ও সংকট মোকাবিলার সামর্থ্য থাকতে পারে। তবে তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যও রয়েছে।
যুদ্ধ একটি বিশেষ পরিস্থিতি, যেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং লক্ষ্য অর্জন করতে অধস্তনদের আদেশ দেয়ার জন্য কর্তৃৃত্বপরায়ণ নেতাদের প্রয়োজন হয়। পক্ষান্তরে আধুনিক ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপকদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রসঙ্গে দলে ঐকমত্য সৃষ্টি করে গণতান্ত্রিক হওয়ার প্রয়োজন হয়। তাদের সামরিক প্রতিপক্ষের মতো ব্যবস্থাপকরাও দলের সদস্যদেরকে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, লক্ষ্য অর্জনের স্পৃহা এবং ব্যবসার সামষ্টিক কল্যাণে অবদান রাখার ইচ্ছাকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করেন।
কিছু ব্যবস্থাপককে প্রকৃতিগতভাবে নেতা বলে মনে হতে পারে। তাদের অধিকাংশের সংগঠিতকরণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, সময়সূচি নির্ধারণ, লক্ষ্য নির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যার সমাধান, যোগাযোগ, আলোচনা ও তত্ত্বাবধান করার দক্ষতা গড়ে তোলার সম্ভাবনা বা সুপ্তশক্তি রয়েছে। পক্ষান্তরে, লোকদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নেতা বানানোর কোন জ্ঞাত পন্থা নেই, যদিও এটা স্পষ্ট যে, নেতাদের ন্যায়পরায়ণতা, সততা, উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং নিজেদেরকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার সামর্থ্য থাকার মতো গুণাবলির প্রয়োজন হয়- যার সবগুলোই নিয়মিত প্রদর্শন করতে হয় যাতে অধস্তনরা দেখতে পারে এবং পরবর্তীকালে তাদের শ্রদ্ধা করতে পারে।
ব্যবস্থাপনার নেতৃত্বের জন্য সামনের পথ নির্দেশ করা অপরিহার্য; সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া পিছন থেকে ঠেলার চেয়ে অনেক বেশি ভাল। বহু নেতা প্রায়ই একাকী, একরোখা, ভাবতান্ত্রিক (যারা নিজেদের পার্থিব দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেয়) হলেও, ব্যবস্থাপকদেরকে অবশ্যই তাদের লোকদেরকে তাদের সঙ্গে নিতে হবে। তারা অবশ্যই দলের সামষ্টিক শক্তির প্রতিফলন ঘটিয়ে ও ব্যবহার করে এবং সেইসাথে নিজস্ব ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির শক্তি প্রয়োগ করে তাদের দলের সাথে কাজ করবেন।
একজন উত্তম নেতা বা ব্যবস্থাপক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান মানবীয় সম্পদ বা উপাদান। উত্তম নেতা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তিনি তার অধীনস্থদের দক্ষতার সাথে পরিপালনের মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অসাধ্য সাধন করতে পারেন।
কার্যকর নেতৃত্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিকে থাকারও উন্নতির মৌলিক উপকরণ। নেতার নেতৃত্বসুলভ গুণের বদৌলতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকবে এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধশালী করতে সাহায্য করে। নেতা সংগঠনরূপ তরীর কান্ডারী স্বরূপ। কান্ডারীবিহীন নৌকা যেমন গন্তব্যভ্রষ্ট হয়। ঝড় তুফানে অথৈ জলে ডুবে যায়, ব্যবসা কারবার প্রতিষ্ঠানেও তেমনি সুযোগ্য নেতার অভাবে বিপথগামী ও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বিক্ষিপ্ত পরিবেশগত দুর্যোগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়। নেতৃত্বসুলভ দক্ষতা অর্জনের জন্য একজন নেতার যেসব গুণাবলির প্রয়োজন হবে তার তালিকা দীর্ঘ। এর অনেকগুলোই আয়ত্ত করা দুঃসাধ্য মনে হলেও বেশিরভাগই অর্জনযোগ্য।
দলকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যে সব গুণাবলী প্রয়োজন তা নিম্নরূপ :
১. সদস্যপদ (Membership) : ফলপ্রসূ নেতা হতে হলে নেতাকে সর্বপ্রথম সংগঠনের সদস্যপদকে মুখ্য হিসেবে গণ্য করতে হবে। এ কারণে প্রবীণ সদস্য নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। প্রবীণ ব্যক্তি দলের সকল সদস্য সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রাখেন এবং অভিজ্ঞতার আলোকে নেতৃত্ব দানে সফল হন।
২. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (Education & Training) : নেতার সাধারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা উচিত। এতে অধস্তন ও অন্যান্য ব্যক্তিদের নিকট তার কদর বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান চালনার ব্যাপারে তাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে হয়।
৩. শক্তি, সামর্থ্য ও ঝুঁকি গ্রহণের সাহস (Energy, Ability and Capacity of facing risk) : নেতার সকল প্রকার ঝুঁকি গ্রহণের মতা থাকা বাঞ্ছনীয়। নেতাকে পর্যাপ্ত মানসিক ও দৈহিক শক্তির অধিকারী হতে হয়। সাহসের সাথে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। যে কোন সময় তাকে জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ সময় মনোবল ঠিক রেখে তাকে সমস্যা সমাধানের জন্য পরিশম করে যেতে হয়। এজন্য তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার দরকার আছে।
৪. নীতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিশেষায়িত জ্ঞান (Specialised Knowledge about policy & procedure) : নেতার সংগঠন নীতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হয়। যার ভিত্তিতে তিনি সংগঠন পরিচালনা করেন।
৫. উদ্ভাবনী শক্তি (Originality) : একজন নেতাকে যথেষ্ঠ পরিমাণ উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী হতে হবে।
৬. সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কার্যাবলী সম্পর্কে ধারণা : (Idea about the function of related department) : নেতাকে তার অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। তাহলে তিনি সুন্দর ও সফলভাবে বিভাগগুলো পরিচালনা করতে স ম হবেন।
৮. দূরদর্শীতা (Foresightedness) : নেতাকে অবশ্য দূরদর্শী হতে হবে। এর ফলে তিনি সুফল অর্জন করতে এবং অসুবিধা এড়াতে সক্ষম হন।
৯. প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক দক্ষতা (Administrative & Organizing Officiency) : নেতাকে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজে দক্ষ হতে হবে। তাহলে তিনি দক্ষতার সাথে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন।
১০. সাহস ও আত্মপ্রত্যয়ন (Courage and Self reliance) : সাহসকিতা নেতার একটি উত্তম গুণ। যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সম্পাদনের জন্য নেতার যথেষ্ট সাহসিকতার প্রয়োজন রয়েছে। একজন নেতার অদৃশ্য সাহস ও সুদৃঢ় আত্মপ্রত্যয় থাকতে হবে। নেতাকে প্রায়শই নতুন প্রযুক্তি ও ধ্যান ধারণা প্রয়োগের ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হয়। পর্যাপ্ত সাহস, মনোবল ও আত্মপ্রত্যয়ন থাকলে তার পক্ষে যে কোন পরিবেশ পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।
১১. দায়িত্ববোধ (Sense of Responsibility) : নেতাকে নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সর্বদাই সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। অধস্তন কর্মীবৃন্দের পক্ষে দায়িত্ব এড়িয়ে চলা সম্ভব হলেও কোনো নেতার পক্ষে দায়িত্ব এড়িয়ে চলা সম্ভব হয় না। তাই নেতার দায়িত্ববোধ থাকা প্রয়োজন।
১২. চারিত্রিক ন্যায়পরায়ণতা (Morally Right and Good) : নেতার চারিত্রিক ন্যায়পরায়ণতা থাকা বাঞ্ছনীয়। তিনি অধস্তনদের নিকট এক আদর্শ ব্যক্তিত্ব। তাঁকে সব সময় হীনমন্যতা, পক্ষপাতিত্ব, অন্যায়, অবিচার, সংকীর্ণতা প্রভৃতির ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। তবেই তিনি দলের সদস্যবৃন্দ ও অন্য সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারবেন। তাঁকে ন্যায়পরায়ণ, নিরপেক্ষ ও আদর্শবাদী হতে হবে। অধস্তনরা নেতার অন্ধ অনুগামীতে পরিণত হবে।
১৩. ব্যক্তিত্ব (Personality) : নেতাকে অবশ্যই শক্তিশালী ও মোহনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হয়। একজন নেতার ব্যক্তিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারী ব্যক্তির পক্ষে সহজেই অপরের শ্রদ্ধাভাজন হওয়া সম্ভব হয় এবং এতে তদারক কার্যে জটিলতা হ্রাস পায়। তাই সম্ভাব্য নেতাকে ব্যক্তিত্ব গঠনের প্রতি প্রয়োজনীয় গুরুত্ব আরোপ করতে হয়। নেতার ব্যক্তিত্বই নেতাকে অনুসারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
১৪. ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন (Personality Development) : প্রত্যেক সফল নেতার মধ্যে ব্যক্তিক উন্নয়নের প্রবণতা থাকে। ব্যক্তিগত জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য তার মধ্যে কর্মতৎপরতার সৃষ্টি হয় এবং এতে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জন সহজতর হয়। নেতাকে সব সময় পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও সমকালীন বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এজন্য সময়ের দাবি অনুযায়ী নিজেকে উন্নত করতে হবে।
১৫. কর্মীবৃন্দের উন্নয়ন (Workers Development) : একজন নেতার মধ্যে যেমন ব্যক্তিক উন্নয়নের সামর্থ্য থাকে তেমনি তার অধীনস্থ কর্মীবৃন্দের উন্নয়নের সামর্থ্য থাকাও বাঞ্ছনীয়। কারণ তার অধীনস্থ কর্মীবৃন্দের দক্ষতা বৃদ্ধি না পেলে তার পক্ষে এককভাবে লক্ষ্যার্জন সম্ভব হয় না। নেতা যেসব কর্মীর নেতৃত্ব দেন, সেসব কর্মীরও নির্দেশনা বুঝবার ও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা থাকতে হবে।
১৬. সাধারণ জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা (General Knowledge and Intelligence) : নেতাকে সকল বিষয়ে সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী হতে হয়। এ জ্ঞান তাকে বিভিন্ন বিষয়ে যে কোন ব্যক্তির সাথে আলাপ আলোচনায় অংশগ্রহণে সমর্থ করে। কাজেই নেতার দেশ বিদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য পরিস্থিতি সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকতে হয়। তাছাড়া একজন আদর্শ নেতা হবেন সুতীক্ষ্ণ মেধা ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। তাৎক্ষণিকভাবে যে কোন সূক্ষ্ম ও জটিল বিষয় বা সমস্যা বুঝাবার মতো বুদ্ধিমত্তা তাঁর থাকতে হবে।
১৭. প্রশিক্ষণ দানের ক্ষমতা (Ability to Training) : নেতার বিশেষ কার্য সম্পাদনে বিশেষ জ্ঞান থাকলে তিনি অধস্তনদের শিক্ষাদান ও পরিচালনা করতে পারেন। অনুসারীদের অবশ্যই শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হবে। নির্বাহীর বিভিন্ন কার্য সম্বন্ধে সম্যক ধ্যান ধারণা থাকা উচিত। কারণ তার অধীনস্থ কর্মীবৃন্দ যাতে সুষ্ঠুভাবে কার্য সম্পাদনে সক্ষম হয় সে ব্যাপারে কর্মীবৃন্দকে অবহিত করতে হয়। সংক্ষেপে বলা যায়, কর্মীবৃন্দকে প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো সামর্থ্যের অধিকারী হওয়া একজন নির্বাহীর অপরিহার্য দায়িত্ব।
১৮. সহযোগিতার মনোভাব ও অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা (Co-operative Attitude and Capacity of establishing importance relations) : সুযোগ্য নেতৃত্বের জন্য নেতাকে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে নেতাকে কাজ করা উচিত। অধস্তনদের অসুবিধা, দুঃখ-কষ্টের সময় নেতার এগিয়ে আসা উচিত। এটা তাঁর একটি সামাজিক দায়িত্ব। এতে তিনি কম ক্ষেত্রে অধস্তনদের সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছাড়াও তার অধস্তন ও সহকর্মীদের সাথে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের গুণ থাকতে হবে।
১৯. পরামর্শদানের সামর্থ্য (Ability of counseling) : একজন নেতা কতটুকু দক্ষ বা যোগ্য তা অনেকাংশে তার বিচার বুদ্ধি কতটুকু পরিমাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বুঝাতে সক্ষম হলেন তার ওপর নির্ভর করে। সংক্ষেপে বলা যায় নেতা শুধু তার অধীনস্থদেরই নেতৃত্ব দেন না তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও প্রদত্ত বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন।
২০. অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার ক্ষমতা (Capacity of understanding others) : নেতাকে অধস্তনদের ও তাঁর সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের মনস্তত্ত্ব অনুধাবন করতে হবে। আলাপ আলোচনা ও কথাবার্তার মাধ্যমে নেতার অপরপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি বা ইচ্ছা অনিচ্ছা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করার ক্ষমতা থাকা উচিত। সফল নেতৃত্ব দানের জন্য নেতাকে তার অনুগামীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, মনোভাব, মূল্যবোধ, লক্ষ্য, আদর্শ, দুর্বলতা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হবে। অধস্তনদের যোগ্যতা ও মেধা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখলেই নেতা তাদেরকে যোগ্যতা অনুযায়ী পরিচালনা করতে পারবে।
২১. অন্যান্য মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন (Capacity to understand others attitude) : নেতাকে কর্মীদের দিয়ে কাজ করাতে হয়। তাই কর্মীদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হয়। এতে করে কর্মীরা সন্তুষ্ট হন এবং কাজে মনোনিবেশ প্রদান করে।
২২. ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা (Patience) : নেতাকে স্বীয় কর্তব্যের জন্য দায়িত্ববোধ ও ধৈর্য্যশীল হতে হবে। সর্বদাই কর্মীবৃন্দ কাঙ্ক্ষিত আচার আচরণ প্রদর্শন করবে এমন আশা করা যায় না। তাই যে কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হওয়া বাঞ্ছনীয়। কোনো অবস্থাতেই তার ধৈর্য্য হারালে চলবে না। যে কোনো উত্তপ্ত ও অস্থিতিশীল পরিবেশে তাকে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
২৩. আন্তরিকতা (Sincerity) : নেতাকে দলের প্রতি ও কাজের প্রতি আন্তরিক হতে হবে। আন্তরিকতার সাথে দলের কার্য পরিচালনা করলে কাজের অগ্রগতি হয়। ফলে প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। তাই নেতাকে আত্মরিক হওয়া প্রয়োজন।
২৫. আবেগের পরিপক্বতা (Maturity of Mentality) : একজন সফল নেতার মানসিক দিকগুলোর পরিপক্বতা থাকা বাঞ্ছনীয়। কোনো অবস্থাতেই তার ভাবাবেগ দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত নয়। যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার বুদ্ধি ও বিচার ক্ষমতা অধিক প্রভাব বিস্তার করা উচিত। নেতাকে অবশ্যই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো যথেষ্ট পরিপক্বতা থাকতে হবে।
২৬. ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা (Abilitly to take quick decision) : নেতার আকস্মিক পরিস্থিতির মেকাবিলার জন্য সংশ্লিষ্ট ঘটনার মূল্যায়ন করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মতা থাকতে হবে। শিল্প-কারখানা বা যে কোন প্রতিষ্ঠানে যে কোন বিষয়ে পরিবেশ পরিস্থিতি ঘোলাটে বা প্রতিকূল হতে পারে। এমনকি কোন না কোন বিষয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের অসন্তোষের উত্তাল ঢেউ উঠতে পারে। এরূপ পরিস্থিতি বিচক্ষণতার সাথে মোকাবিলা করার মত বিচার বুদ্ধি, ধৈর্য ও সাহস থাকা একজন নেতার জন্য অত্যাবশ্যক। এরূপ পরিস্থিতিতে ১০০% সঠিক ও ত্বরিত সিদ্ধান্ত প্রদান করা নেতার একটি বড় গুণ। এক্ষেত্রে যে কোন ধরনের ভুল নেতার নিজের ও প্রতিষ্ঠানের জন্য ধ্বংসাত্মক হবে। জটিল বা Critical পরিস্থিতির মোকাবিলার মাধ্যমে সুযোগ্য নেতৃত্বের বিকাশ সম্ভব।
২৭. আত্মসচেতনতা ও আত্মসমালোচনা (Self criticism) : নেতাকে অবশ্যই আত্মসচেতন হতে হবে। বিভিন্ন পরিবেশে তাঁর ভাল মন্দ বুঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। কোন কাজটি ভাল এবং কোন কাজটি মন্দ তা বুঝে তাকে কাজ করে যেতে হবে। তাঁর আত্মসমালোচনা করার মত জ্ঞান বা মতা থাকতে হবে। অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি নিজের কর্মকান্ড ভাল-মন্দ বিচার করে দেখবেন, তবেই তিনি যথার্থ নেতৃত্বের উন্নয়নে সক্ষম হবেন।
২৮. নির্ভরযোগ্য বিচার বুদ্ধি (Dependable judgement) : একটি দলের নেতা ও পরিচালক হিসাবে তার শক্তিশালী বিবেক বুদ্ধি থাকতে হবে, যাতে তিনি কারো প্রতি অবিচার না করে সবারই প্রতি সুবিচার করতে পারেন।
২৯. প্রবর্তনের ক্ষমতা (Power of Innovation) : প্রতিষ্ঠানের সাফল্য বৃদ্ধিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আনতে হবে। পরিবর্তিত অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য নির্বাহীকে উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী হতে হয় এবং নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতির প্রবর্তন করতে হয়। তাই তার মধ্যে কোন কিছু প্রবর্তন করার মতো মতা থাকা বাঞ্ছনীয়। নেতাকে হতে হবে সৃজনশীল ও মেধাবী।
৩০. যোগাযোগের নৈপুণ্য (Communication skill) : নেতাকে সর্বদা তাঁর আদেশ ও নির্দেশাবলী অধস্তনদের নিকট প্রেরণ করতে হয়। অন্যান্য গুণাবলীর মধ্যে নেতার যোগাযোগ নৈপুণ্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। যত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নেতার মনোভাব অধস্তনের কাছে প্রকাশ করা সম্ভব হয়, ততই তদারকের সফলতা বাড়ে। নেতাকে যোগাযোগের আধুনিক কৌশলগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। পাশাপাশি স্বতঃস্ফূর্ত যোগাযোগ তৈরী করার জন্য নেতাকে তাঁর অধস্তন ও অন্যান্য ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে ক্ষমতার অধিকারী হতে হবে।
৩৩. সময় সচেতনতা (Time Awareness) : নেতাকে প্রতিনিয়ত সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়। অধীনস্থ কর্মীদের দিয়ে সময়ের কাজ সময়মতো শেষ করতে হবে। এই জন্য নেতাকে সময় সচেতনতা দায়িত্ববোধ থাকা প্রয়োজন।
৩৪. অনুসন্ধিৎসু মন (Inquisition Mentality) : প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অর্জনের জন্য নেত্র অনুসন্ধিৎসু মনের অধিকারী হওয়া প্রয়োজন। কারণ সব সময় তাকে নতুন নতুন পথের সন্ধান করতে হয় এবং প্রতিষ্ঠানকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সচেষ্ট থাকতে হয়। বিশেষত কর্মী ও কাজ সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জেনে নিতে হবে।
৩৫. নেতৃত্ব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা (Aim of acquiring Leadership) : নিজকে একজন প্রতিষ্ঠিত দক্ষ নেতা হিসাবে গড়ে তোলার বাসনা অবশ্যই থাকতে হবে। যিনি নেতা হবেন তার মনে নেতৃত্ব অর্জনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা লক্ষ্য থাকতে হবে এবং নেতৃত্ব অর্জনের লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তাকে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে।
৩৬. অধ্যবসায়ী (Perseverance) : নেতাকে অবশ্যই অধ্যবসায়ী হতে হবে। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলে তিনি নেতৃত্বসুলভ গুণ অর্জনে সক্ষম হবেন।
৩৯. সততা প্রতিষ্ঠা (Establishing Honesty) : সংগঠনের প্রতিটি বিভাগ ও উপ-বিভাগের সকল স্তরে সততা প্রতিষ্ঠা করতে হয়। নেতা ও কর্মীদের মধ্যে যদি সততা না থাকে তবে কখনই সংগঠনের উন্নতি সম্ভব নয়। উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হিসাবে সততা প্রতিষ্ঠায় নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪০. মানবীয় সম্পর্কের ধারণা (Knowledge of Human Relations) : নেতাকে তাঁর দলের দলপতি হিসেবে কাজ করতে হয়। পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও সহযোগিতা বজায় রাখার জন্য তাঁর মানবীয় সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত।
৪১. দলীয় মনোবল সৃষ্টি (Creating Group Morality) : একজন নেতার ফলপ্রসূতা তার দলীয় মনোবল সৃষ্টির মধ্যে নিহিত থাকে। দলীয় সদস্যদের কাজ এবং দলীয় লক্ষ্য যাতে সর্বদা সঙ্গতিপূর্ণ থাকে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। নেতা অবশ্যই দল সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা রাখবেন। দলীয় সদস্যদের চাহিদা, সমস্যা, দুর্বলতা ইত্যাদি জেনেই দলের মনোবলকে চাঙ্গা করতে হবে।
৪২. নমনীয়তা ও স্থিতিস্থাপকতা (Flexibility & Elasticity) : কার্যে সফলতা লাভের জন্য একজন নেতার অবশ্যই নমনীয় মনোভাব থাকা বাঞ্ছনীয়। কোন বিষয়ে তার ধ্যান-ধারণা যত সঠিক বলে প্রতীয়মান হোক না কেন অধস্তন কর্মীবৃন্দের ইচ্ছের বিরুদ্ধে উক্ত ধারণার বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। তাই তার সর্বদাই অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করার মতো মন মানসিকতা থাকা উচিত।
৪৩. সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা (Mentality to Accept Criticism) : একজন সফলকাম নির্বাহীর স্বীয় কার্যের সমালোচনা সহ্য করার মতো সামর্থ্য অর্জন করা বাঞ্ছনীয়। প্রতিটি কর্মী যাতে নির্ভয়ে তার অভিমত প্রকাশে সক্ষম হয় সে জাতীয় পরিবেশ উন্নয়নের প্রতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। কর্মীদেরকে নেতার সিদ্ধান্তের ভুল ত্রুটি সম্পর্কে গঠনমূলক সমালোচনার সুযোগ দিতে হবে। নেতাকে এসব সমালোচনা আন্তরিকতার সাথে গ্রহণের মানসিকতা রাখতে হবে।
৪৪. ব্যক্তিক প্রণোদনা (Personal Motivation) : নেতার নেতৃত্ব প্রদানের ইচ্ছে থাকা বাঞ্ছনীয়। তার মধ্যে নেতৃত্ব প্রদানের স্পৃহা বর্তমান না থাকলে নেতৃত্ব সুলভ গুণাবলী উন্নয়নের সম্ভাবনা থাকে না। সেদিক হতে ব্যক্তিক প্রণোদনা নেতৃত্ব বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নেতৃত্ব দেবার প্রবণতা বা ঝোঁক নেতার মধ্যে থাকতে হবে। নিজে কাজে উৎসাহ না পেলে নেতা কখনো সফল নেতৃত্ব দিতে পারবে না।
৪৫. কারিগরি সামর্থ্য (Technical Ability) : সর্বক্ষেত্রে কারিগরি সামর্থ্য অপরিহার্য না হলেও কোনো কোন ক্ষেত্রে কার্যের সফলতা অর্জনের জন্য নেতার কারিগরি বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারিগরি বিষয়ে নেতা জ্ঞাত হারে কর্মীবৃন্দের কাজে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা বহুলাংশে হ্রাস পায়। নেতার প্রযুক্তিগত ধারণা কাজের তদারকির মাত্রাকে অনেক বেশি কার্যকর করে।
৪৬. সামাজিক নৈপুণ্য (Social Skill) : নেতাকে সমাজ ও সমাজের বিভিন্ন চালক সম্বন্ধে সমক্যভাবে অবহিত হতে হয়। তা না হলে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীবৃন্দের ভাবাবেগ, ইচ্ছে অনিচ্ছে ও আচার আচরণের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। সমাজ সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে ধারণ থাকলে কর্মীদের খুব সহজেই প্রয়োজনীয় উদ্দীপনার জোগান দেয়া সম্ভব হবে।
৪৭. সহযোগিতার মনোভাব ও অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা (Co-operative Attitude and Capacity of Establishing Informal Relations) : সুযোগ্য নেতার সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করা উচিত। অধস্তনদের অসুবিধা, দুঃখ-কষ্টের সময় নেতার এগিয়ে আসা উচিত। এটা তার একটি সামাজিক দায়িত্ব। এতে তিনি কর্মক্ষেত্রে অধস্তনদের সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। আনুষ্ঠানিক সর্ম্পক ছাড়াও তার অধস্তন ও সহকর্মীদের সাথে অনানুষ্ঠানিক সর্ম্পক স্থাপনের গুণ থাকতে হবে।
৪৮. বিশ্লেষণিক ক্ষমতা (Analytical Power) : বিভিন্ন সমস্যাদি বিচার বিশ্লেষণ করে সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা একজন নেতার থাকতে হবে। তার বিশ্লেষণ ক্ষমতা না থাকলে সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রায় সময়ই সম্ভব হয় না। সে দিক থেকে সফল নেতার বিশ্লেষণিক ক্ষমতার অধিকারী হওয়া প্রয়োজন। নেতাকে তার অতীত অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে যে কোনো সমস্যাকে বিচার বিবেচনা করতে হয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক, সামরিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক যে কোন ক্ষেত্রে হোক না কেন, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে কার্যকর নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
(Collected From Different Sources)
0 Comments